উজ্বল বিশ্বাস, বেনাপোল(যশোর): ব্যবসায়ীদের অনুরোধে দেশের আমদানি-রপ্তানি ও সাপ্লাই চেইন সচল রাখা তথা অর্থনীতির ও জনগণের স্বার্থ বিবেচনায় লাগাতার কমপ্লিট শাটডাউন দুই দিন পর প্রত্যাহার করছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। এতে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতের সাথে আমদানি,রফতানি পণ্য পরিবহন ও বন্দর থেকে পণ্য খালাস শুরু হয়েছে। তবে একটি পূর্ণাঙ্গ ও টেকসই রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কারের উদ্যোগ ও কার্যক্রম যথারীতি অব্যাহত থাকবে বলে জানা গেছে।
রোববার (২৯ জুন) ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা শেষে এ তথ্য জানান সংগঠনের সভাপতি হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার।
এদিকে কমপ্লিট শাটডাউন প্রত্যাহারে আজ সকাল থেকে বেনাপোল কাস্টমসের কর্মকর্তা,কর্মচারীরক কাজে যোগ দিয়েছে। এতে বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের মধ্যে স্বাভাবিক আমদানি রফতানি বানিজ্য শুরু হয়েছে। সরকারকে রাজস্ব পরিশোধের মাধ্যমে বন্দর থেকেও পণ্য খালাশ শুরু হয়েছে। এতে অনেকটা শস্তি ফিরেছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে।
এর আগে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসুচীতে গত শনিবার থেকে রোববার দিনভর সবধরনের বানিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল দুই দেশের মধ্যে। এতে বিভিন্ন ভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছিল ব্যবসায়ীরা।
সরকারের পক্ষ থেকে বিবৃতিতে বলা হয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানায় সরকার। অন্যথায় ‘দেশের জনগণ ও অর্থনীতির সুরক্ষায়’ সরকার কঠোর হতে বাধ্য হবে বলে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
আরো বলা হয়, বাংলাদেশের বাজেট ব্যবস্থাপনায় উন্নয়নমুখী কার্যক্রম পরিচালনার সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হলো দুর্বল রাজস্ব সংগ্রহ ব্যবস্থা। রাষ্ট্রের প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের রাজস্ব সংগ্রহ অনেক কম। এর মূল কারণ হলো আমাদের রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থাপনার নানা দুর্বলতা, অনিয়ম ও দুর্নীতি।
এ পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার সকল অংশীজনের পরামর্শ অনুযায়ী জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সরকার গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, রাজস্ব সংস্কারের কাজকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী নজিরবিহীনভাবে গত ২ মাস ধরে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি এবং রাজস্ব আদায় কার্যক্রম অন্যায় ও অনৈতিকভাবে ব্যাহত করে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে আন্দোলনের নামে চরম দুর্ভোগ তৈরি করেছে, যা সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য।
সংস্কারের বিরোধিতা ছাড়াও অর্থ বছরের শেষ ২ মাসে তারা রাজস্ব আদায় কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করেছে। এই তথাকথিত আন্দোলন পরিকল্পিত ও দুরভিসন্ধিমূলক যা জাতীয় স্বার্থ এবং নাগরিক অধিকারের চরম পরিপন্থি। সরকারের পক্ষ থেকে রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি বিবেচনায় নেওয়ার সুস্পষ্ট ঘোষণা দেওয়া হয় ও আলোচনায় আসার আহ্বান জানালেও তারা তা অগ্রাহ্য করে।
আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার গ্রহণযোগ্য সমাধান না করে তারা আন্দোলনের নামে অনমনীয় অবস্থান নিয়ে ক্রমাগত দেশের অর্থনীতির ক্ষতি করে চলেছে।
এ পরিস্থিতিতে, অতি জরুরি আমদানি-রপ্তানি ও বৈদেশিক বাণিজ্যের কার্যক্রম চলমান রাখার জাতীয় স্বার্থে সরকার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আওতাধীন সকল কাস্টমস হাউস, আইসিডি, বন্ড কমিশনারেট এবং শুল্ক স্টেশনসমূহের সকল শ্রেণির চাকরিকে অত্যাবশ্যকীয় সার্ভিস ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বলা হয়, অনতিবিলম্বে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মস্থলে ফিরে যাবেন এবং আইনবিরোধী ও জাতীয় স্বার্থ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড থেকে সরে আসবেন। অন্যথায় দেশের জনগণ ও অর্থনীতির সুরক্ষায় সরকার কঠোর হতে বাধ্য হবে।