ইমরুল কায়েশ (যশোর): বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোরের আহ্বায়ক রাশেদ খান ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে
পদত্যাগ করেছেন।
মঙ্গলবার (০১ জুলাই) দিবাগত রাত ২টায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তাঁর অ্যাকাউন্টে এক স্ট্যাটাসে পদত্যাগের কথা জানান।
ওই পোস্টে তিনি লিখেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোর জেলার আহ্বায়ক পদ থেকে আমি স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিচ্ছি। একই সঙ্গে এনসিপি ও এর ছাত্র কিংবা যুব উইংয়ের সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই৷
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র জনতার বিজয়ের বর্ষপূর্তি উদযাপন উপলক্ষে যখন সারাদেশে মোমবাতি প্রজ্বালন হচ্ছে, এমন সময়ে রাশেদের পদত্যাগের স্ট্যাটাসে হতবাক হয়েছেন তাঁর সহকর্মীরা। মুর্হূতে তাঁর পোস্টের স্কিনশর্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা-সমালোচনাও করছেন।
পদত্যাগের কারণ জানতে গভীর রাতে রাশেদ খানের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তবে ফেসবুকে পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার পর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের এক সহকর্মীর ইনবক্সে লেখেন, ‘সারাক্ষণ কাঁদা ছোঁড়াছুড়ি। এসব আর ভালো লাগছে না।
তিনি লিখেন, ‘দীর্ঘদিন যাবত কেন্দ্রীয় কমিটির কোনো নির্দেশনা না থাকায়, সংগঠন সারা দেশেই স্তিমিত হয়ে গেছে। স্ব স্ব ইউনিট থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে অনেকসময় কেন্দ্রীয় নেতাদের বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়। একইসঙ্গে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এনসিপি, যুবশক্তি, বাগছাস ইত্যাদি রাজনৈতিক প্লাটফর্মে যুক্ত হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি কমন প্লাটফর্ম হলেও এর নবগঠিত কমিটি ‘এনসিপি’ দ্বারা প্রভাবিত একটি প্রহসনমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে গঠন করা হয়েছে, যা বিভিন্ন জেলার নেতৃবৃন্দের মাঝে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে! তবু জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্লাটফর্ম হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সবসময় শুভকামনা থাকবে। গণমানুষের কল্যাণে তাদের নিবেদনকে আমি সবসময় শ্রদ্ধার চোখে দেখবো।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৬ নভেম্বর রাশেদ খানকে আহ্বায়ক এবং জেসিনা মুর্শীদ প্রাপ্তিকে সদস্যসচিব করে ১০১ সদস্যবিশিষ্ট যশোর জেলা কমিটি অনুমোদন দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কেন্দ্রীয় পরিষদ। এই কমিটি ঘোষণার ২৪ ঘন্টার মধ্যে জেলা কমিটির অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে পদত্যাগ করেন যুগ্ম আহ্বায়ক-১ মাসুম বিল্লাহ। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পুনর্বাসন করা হয়েছে অভিযোগ তুলে এক সপ্তাহের মধ্যে আরও ৭ নেতা পদত্যাগ করেন।
সর্বশেষ চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি উপজেলা কমিটি গঠনে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে সদস্য সচিব জেসিনা মোর্শেদ প্রাপ্তির পদ স্থগিত করে কেন্দ্রীয় কমিটি। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে কেন্দ্রীয় ও জেলার শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে নীতিবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ওঠায় অনেক নেতাকর্মী নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষিত কর্মসূচিতেও নেতাকর্মীদের উপস্থিতি দেখা যায় হাতেগোনা।
নেতাকর্মীরা জানিয়েছে, গত বছর কোটা আন্দোলনের প্রথম থেকেই যশোরে নেতৃত্ব দেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাশেদ খান। বাম ঘরোনার ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা এই শিক্ষার্থী জুলাই আন্দলনে শিক্ষার্থীদের নিয়ে জেলায় তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন। যার পুরস্কার স্বরুপ পরবর্তীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোর কমিটির দায়িত্বভার তুলে দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। হঠাৎ কমিটি থেকে পদত্যাগ করায় হতবাক হয়েছেন জেলার বিভিন্ন অঙ্গনের মানুষ। রাশেদের এই পদত্যাগের মধ্য দিয়ে গুঞ্জন উঠেছে, কয়েকদিনের মধ্যে জেলা কমিটির আরও ডজনখানেক নেতাকর্মী পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন। তারা সবাই রাশেদের অনুসারী হিসেবেই পরিচিত।














