ঢাকা ০১:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫

যশোরে রানার সম্পাদক সাইফুল আলম মুকুল হত্যা মামলা ঝুলে আছে দেড় দশক

  • newsdesk
  • আপডেট: ০৯:২৫:৩৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ অগাস্ট ২০২৫
  • ২৫

আজকের কথা(যশোর)দৈনিক রানার সম্পাদক সাইফুল আলম মুকুলের আজ ২৭ তম মৃত্যু বার্ষিকী। দিনটি উপলক্ষে প্রেসক্লাব যশোরসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন শোক র‌্যালি,শহীদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও দোয়া আয়োজন করে।

জানা যায়, ১৯৯৮ সালের ( ৩০ আগস্ট) কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফেরার পথে বোমা হামলা চালিয়ে তাকে গুলি করে হত্যা করে চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা।
এদিকে হত্যাকারীরা আজ পর্যন্ত বিচারের আওতায় না আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে শহীদ সাংবাদিক মুকুলের পরিবার ও সাংবাদিক সমাজ।

সন্ত্রাসীদের হাতে নির্মম ভাবে হত্যার শিকার যশোরের প্রতিবাদী সাংবাদিক দৈনিক রানার পত্রিকার সম্পাদক আর এম সাইফুল আলম মুকুল হত্যার আজ ২৭ বছর পার হলো। মামলার কার্যক্রম দেড় দশক ধরে ঝুলে আছে হাইকোর্টে। এতে এখনো ঘাতকেরা রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। বিচার না পেয়ে ক্ষুব্ধ ও হতাশ মুকুলের পরিবারের সদস্য ও যশোরের সাংবাদিক সমাজ।
১৯৯৮ সালের ( ৩০ আগস্ট) কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফেরার পথে বোমা হামলা চালিয়ে তাকে গুলি করে হত্যা করে চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা।

এদিকে আইনজীবীরা বলছেন, যে রিটের কারণে উচ্চ আদালতে মামলাটি ঝুলে আছে এর নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নিম্ন আদালতে বিচারকাজ শুরু করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থার মধ্যেই আজ শনিবার বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে মুকুলের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হতে যাচ্ছে।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৮ সালের ৩০ আগস্ট রাতে মুকুল শহর থেকে বেজপাড়ার বাসভবনে যাওয়ার পথে চারখাম্বার মোড়ে দুর্বৃত্তদের বোমা হামলায় নিহত হন। এ ঘটনায় পরদিন তাঁর স্ত্রী হাফিজা আক্তার শিরিন কারও নাম উল্লেখ না করে কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা করেন। পরে তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) যশোর জোনের তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) দুলাল উদ্দিন আকন্দ ১৯৯৯ সালের ২৩ এপ্রিল প্রয়াত সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামসহ ২২ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। একপর্যায়ে আইনি জটিলতার কারণে মামলার কার্যক্রম থমকে পড়ে। মামলাটি হাইকোর্ট থেকে বাতিল করে দেওয়া হয়।

হত্যাকাণ্ডের সাত বছর পর ২০০৫ সালে হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ মামলা পুনরুজ্জীবিত করে বর্ধিত তদন্তের নির্দেশ দেন। ওই বছরের ২১ ডিসেম্বর সিআইডি কর্মকর্তা মওলা বক্স নতুন দুজনের নাম অন্তর্ভুক্ত করে আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেন। পরের বছরের ১৫ জুন যশোরের স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল (৩) এবং অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে (২) ২২ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগ গঠন করা হয়। এ সময় মামলা থেকে তৎকালীন মন্ত্রী তরিকুল ইসলাম ও রূপম নামের আরেক আসামিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ২০১০ সালে মামলার ২৫ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়।
আদালত সূত্র জানায়, এ সময় মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে আসামি সাংবাদিক ফারাজী আজমল হোসেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে আবেদন করেন। তিনি উচ্চ আদালতে যাওয়ায় ফের মামলার কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। গত ১৫ বছর তা ওই অবস্থায় রয়েছে। নিম্ন আদালতে আজমলের অংশ বাদ রেখে বিচার কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা কার্যকর হয়নি।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু জানান, মামলার বিচারকাজ শেষ পর্যায়ে ছিল। কিন্তু হাইকোর্টে এক আসামির আবেদনের কারণে মামলাটির আর্গুমেন্ট বা যুক্তিতর্ক শুরু করা সম্ভব হয়নি। হাইকোর্টে আবেদনের নিষ্পত্তির পর সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলার বিচারকাজ শুরু হবে।

প্রেসক্লাব যশোরের সাধারন সম্পাদক তৌহিদুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আইনি জটিলতা দেখিয়ে সাংবাদিক মুকুল হত্যার বিচার হচ্ছে না। এটা রাষ্ট্রের দুর্বলতা। দেশের যত সাংবাদিক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, কোনোটাই বিচারের মুখ দেখেনি। সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনে জড়িতদের চিহ্নিত ও বিচার না হওয়ায় খুনিদের উন্মাদনা বেড়ে যাচ্ছে। আশা করব, সরকার মুকুল হত্যার সঠিক বিচারকাজ দ্রুত শুরু করবে এবং পরিবারকে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করবে।

এদিকে আজ মুকুলের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রেসক্লাব যশোর ও সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোর বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহন করে। এর মধ্যে ছিল শোক র‌্যালি, শহীদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও দোয়া মাহফিল।

সর্বাধিক পঠিত

দেশে ফেরা নিয়ে শর্ত দিয়েছেন শেখ হাসিনার

যশোরে রানার সম্পাদক সাইফুল আলম মুকুল হত্যা মামলা ঝুলে আছে দেড় দশক

আপডেট: ০৯:২৫:৩৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ অগাস্ট ২০২৫

আজকের কথা(যশোর)দৈনিক রানার সম্পাদক সাইফুল আলম মুকুলের আজ ২৭ তম মৃত্যু বার্ষিকী। দিনটি উপলক্ষে প্রেসক্লাব যশোরসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন শোক র‌্যালি,শহীদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও দোয়া আয়োজন করে।

জানা যায়, ১৯৯৮ সালের ( ৩০ আগস্ট) কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফেরার পথে বোমা হামলা চালিয়ে তাকে গুলি করে হত্যা করে চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা।
এদিকে হত্যাকারীরা আজ পর্যন্ত বিচারের আওতায় না আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে শহীদ সাংবাদিক মুকুলের পরিবার ও সাংবাদিক সমাজ।

সন্ত্রাসীদের হাতে নির্মম ভাবে হত্যার শিকার যশোরের প্রতিবাদী সাংবাদিক দৈনিক রানার পত্রিকার সম্পাদক আর এম সাইফুল আলম মুকুল হত্যার আজ ২৭ বছর পার হলো। মামলার কার্যক্রম দেড় দশক ধরে ঝুলে আছে হাইকোর্টে। এতে এখনো ঘাতকেরা রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। বিচার না পেয়ে ক্ষুব্ধ ও হতাশ মুকুলের পরিবারের সদস্য ও যশোরের সাংবাদিক সমাজ।
১৯৯৮ সালের ( ৩০ আগস্ট) কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফেরার পথে বোমা হামলা চালিয়ে তাকে গুলি করে হত্যা করে চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা।

এদিকে আইনজীবীরা বলছেন, যে রিটের কারণে উচ্চ আদালতে মামলাটি ঝুলে আছে এর নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নিম্ন আদালতে বিচারকাজ শুরু করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থার মধ্যেই আজ শনিবার বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে মুকুলের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হতে যাচ্ছে।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৮ সালের ৩০ আগস্ট রাতে মুকুল শহর থেকে বেজপাড়ার বাসভবনে যাওয়ার পথে চারখাম্বার মোড়ে দুর্বৃত্তদের বোমা হামলায় নিহত হন। এ ঘটনায় পরদিন তাঁর স্ত্রী হাফিজা আক্তার শিরিন কারও নাম উল্লেখ না করে কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা করেন। পরে তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) যশোর জোনের তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) দুলাল উদ্দিন আকন্দ ১৯৯৯ সালের ২৩ এপ্রিল প্রয়াত সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামসহ ২২ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। একপর্যায়ে আইনি জটিলতার কারণে মামলার কার্যক্রম থমকে পড়ে। মামলাটি হাইকোর্ট থেকে বাতিল করে দেওয়া হয়।

হত্যাকাণ্ডের সাত বছর পর ২০০৫ সালে হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ মামলা পুনরুজ্জীবিত করে বর্ধিত তদন্তের নির্দেশ দেন। ওই বছরের ২১ ডিসেম্বর সিআইডি কর্মকর্তা মওলা বক্স নতুন দুজনের নাম অন্তর্ভুক্ত করে আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেন। পরের বছরের ১৫ জুন যশোরের স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল (৩) এবং অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে (২) ২২ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগ গঠন করা হয়। এ সময় মামলা থেকে তৎকালীন মন্ত্রী তরিকুল ইসলাম ও রূপম নামের আরেক আসামিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ২০১০ সালে মামলার ২৫ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়।
আদালত সূত্র জানায়, এ সময় মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে আসামি সাংবাদিক ফারাজী আজমল হোসেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে আবেদন করেন। তিনি উচ্চ আদালতে যাওয়ায় ফের মামলার কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। গত ১৫ বছর তা ওই অবস্থায় রয়েছে। নিম্ন আদালতে আজমলের অংশ বাদ রেখে বিচার কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা কার্যকর হয়নি।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু জানান, মামলার বিচারকাজ শেষ পর্যায়ে ছিল। কিন্তু হাইকোর্টে এক আসামির আবেদনের কারণে মামলাটির আর্গুমেন্ট বা যুক্তিতর্ক শুরু করা সম্ভব হয়নি। হাইকোর্টে আবেদনের নিষ্পত্তির পর সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলার বিচারকাজ শুরু হবে।

প্রেসক্লাব যশোরের সাধারন সম্পাদক তৌহিদুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আইনি জটিলতা দেখিয়ে সাংবাদিক মুকুল হত্যার বিচার হচ্ছে না। এটা রাষ্ট্রের দুর্বলতা। দেশের যত সাংবাদিক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, কোনোটাই বিচারের মুখ দেখেনি। সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনে জড়িতদের চিহ্নিত ও বিচার না হওয়ায় খুনিদের উন্মাদনা বেড়ে যাচ্ছে। আশা করব, সরকার মুকুল হত্যার সঠিক বিচারকাজ দ্রুত শুরু করবে এবং পরিবারকে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করবে।

এদিকে আজ মুকুলের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রেসক্লাব যশোর ও সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোর বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহন করে। এর মধ্যে ছিল শোক র‌্যালি, শহীদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও দোয়া মাহফিল।