আবিদ হোসেন (যশোর): বাজার মুল্যের অর্ধেক দাম দেখিয়ে দেশের বাইরে ইলিশ রফতানির অনুমতি প্রায় ১২০ কোটি টাকার সমপরিমানের বৈদেশিক আয় কুমবে ধারনা করা হচ্ছে। এছাড়া এই অর্থ অবৈধ লেনদেন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে যেমন একদিকে কাঙ্খিত বৈদেশিক মুদ্রা আহরন থেকে বঞ্চিত হবে সরকার অন্যদিকে বিপুল পরিমানের এই অর্থ ব্যবহার হতে পারে অপরাধ মুলক কাজে। ক্রয় মুল্যের কম দামে কেন ভারতে ইলিশ রফতানি করছে এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারেনি ব্যবসায়ীরা। তবে মৎস কর্মকর্তা বলছেন বানিজ্য মন্ত্রনালয় প্রতি কেজি ১২ ডলার ৫০ সেন্ট রফতানি মুল্য বেঁধে দেওয়ায় ব্যবসায়ীরা সে সুযোগ গ্রহন করছে।
বানিজ্যিক সংশিষ্টরা জানান, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে ইলিশ উৎপাদনের পরিমান ছিল ৫ লাখ ২৯ হাজার ৪৮৭ মেট্রিক টন। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন অনেক কম হলেও ২০১৯ সাল থেকে সরকার বিশেষ বিশেষ বিবেচনায় প্রতিবছর দূর্গা পুজাতে ইলিশ রফতানি হচ্ছে। এবছর গত ১৬ সেপ্টেম্বর অন্তবর্তীকালিন সরকারের বানিজ্য মন্ত্রনালয় প্রতি কেজি ১২.৫০ ডলার(বাংলাদেশি অর্থে ১৫৫০ টাকা) মুল্য বেঁধে দিয়ে দেশের ৩৭ জন রফতানি কারককে ১২০০ টন ইলিশ রফতানির অনুমতি দেয়। ১৭ সেপ্টেম্বর ইলিশ রফতানি শুরু হয়। শর্তানুযায়ী ৫ অক্টোম্বরের মধ্যে রফতানি শেষ করতে হবে। এদিকে স্থানীয় বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশ ২৫০০ থেকে ২৬০০ টাকায় বিক্রী হচ্ছে। পাইকারি বাজার থেকে কিনতে হয় ২৪০০ থেকে ২৫০০ টাকা। কিন্তু কাগজ পত্রে ১৫৫০ টাকা দেখিয়ে রফতানি করা হচ্ছে। । এখানে প্রতি কেজি ১৫৫০ টাকা মুল্য দেখিয়ে রফতানি করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে কেজিতে ১০০০ টাকা করে কম দেখানো হচ্ছে। এতে ১২০০ টন ইলিশে ১২০ টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আহরন থেকে বঞ্চিত হবে সরকার। এ অর্থ অবৈধ প্রক্রিয়ায় লেনদেন মাদক,স্বর্নসহ বিভিন্ন পণ্য ক্রয়,বিক্রয়ে মুল্য পরিশোধের সুযোগ তৈরী হবে বলছেন সাধারন ব্যবসায়ীরা। এদিকে ইলিশ রফতানিতে অনুমোদনের ক্ষেত্রে সঠিক যাচাই-বাচাই না করায় গতবার ৪৯ জন রফতানিকারকের মধ্যে মাত্র ২০ জন ভারতে ইলিশ রফতানি করতে পেরেছিল। সে সময় ২৪২০ টনের মধ্যে মাত্র রফতানি হয়েছিল ৫৩২’টন। এবছর ০৫ অক্টোবরের মধ্যে ইলিশ রফতানি শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছে সরকার। ১২০০ টনের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত মাত্র ১০২ টন রফতানি হয়েছে।
বেনাপোল বাজারের মাছ বিক্রেতা পরিতোশ মন্ডল জানান, ১ কেজি ওজনের ইলিশের দাম ২৫০০ থেকে ২৬০০ টাকা বিক্রী। ভারতে ইলিশ চলে যাওয়ায় বাজারে সংকট তৈরী হয়েছে।
বাজার মুল্যের অর্ধেক দামে কিভাবে ইলিশ রফতানি হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে রফতানিকারকেরা জানিনা বলে কথা এড়িয়ে যান।
সাধারন সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী সম্রাট জানান, কম মুল্যে দেখিয়ে ইলিশ রফতানি বৈদেশিক মুদ্রা আহরন কুমবে এবং অবৈধ লেনদেনের সুযোগ তৈরী হচ্ছে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়ন বন্দর বিষয়ক সম্পাদক মোঃ মেহেরুল্লাহ জানান, ইলিশ রফতানিতে সক্ষমতা দেখে রফতারিকারক নির্ধারন করতে হবে। বাচাই,বাচায়ের অভাবে গেল বছর অনেকেই এক কেজিও রফতানি করতে পারেনি।
বেনাপোল স্থলবন্দর মৎস ও মাননিয়ন্ত্রন অফিসের ইন্সেসপেক্টর আসাওয়াদুল ইসলাম জানান, বানিজ্য মন্ত্রনালয় প্রতি কেজি ইলিশ ১২.৫ ডলার মুল্যে রফতানির সুযোগ দিয়েছে। বাজার মুল্যের কম মুল্যে রফতানি হলেও একারনে তাদের আটকানোর সুযোগ নেই। এসময় তিনি আরো জানান, গত ৯ দিনে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ১০ জন রফতানিকারক ভারতে ১০২ মেট্রিক টন ইলিশ রফতানি করেছেন। প্রতিটা ইলিশের ওজন ছিল ১ কেজি থেকে শুরু করে দেড় কেজির মধ্যে।।
