এনবি নিউজ : বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত নতুন ভিসানীতির প্রয়োগ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে বলে গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার এক বিবৃতিতে এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি ঘোষণার প্রায় চার মাস পর তার আওতায় পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হলো। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের নতুন একটি অধ্যায়ের সূচনা হলো। এ ঘোষণার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মার্কিন বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার-সেক্রেটারি উজরা জেয়া আবারও বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ওপর জোর দেওয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাবের কথা জানান।
কূটনৈতিক সূত্র জানান, বাংলাদেশে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় থাকা ব্যক্তিদের ওপর এ ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তবে কার কার ওপর এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তা প্রকাশ্যে জানাবে না যুক্তরাষ্ট্র। শুধু কোন কোন ধরনের নির্বাচনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হচ্ছে তা ভিসানীতির আলোকে প্রকাশ করা হবে। তবে যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে তাদের ব্যক্তিগত পর্যায়ে দূতাবাস থেকে বা অন্যভাবে জানিয়ে দেওয়া হবে।
গতকাল সন্ধ্যায় মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আজ (গতকাল) পররাষ্ট্র দফতর বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাদানে দায়ী এবং তাতে সহযোগিতাকারী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ শুরু করেছে। এই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়তা অব্যাহত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর বলেছে, এসব ব্যক্তি ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবেন। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অন্য ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এ নীতির আওতায় ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারেন। এই ব্যক্তিদের মধ্যে বর্তমান ও সাবেক বাংলাদেশি কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা রয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমাদের আজকের এসব পদক্ষেপ শান্তিপূর্ণভাবে সুষ্ঠু ও অবাধ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের যে লক্ষ্য রয়েছে, তার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। এ ছাড়া এর মধ্য দিয়ে যাঁরা বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র এগিয়ে নিতে চায়, তাঁদের প্রতি সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে তারও প্রতিফলন ঘটছে।
বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গত ২৫ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। তাতে বলা হয়, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বাংলাদেশিদের ভিসা দেবে না দেশটি। সেদিন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে ব্লিঙ্কেন বলেছিলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করা হয়েছে। এ নীতির অধীনে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা যে কোনো বাংলাদেশির জন্য ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপে সক্ষম হবে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব ভোটার, রাজনৈতিক দল, সরকার, নিরাপত্তা বাহিনী, সুশীলসমাজ, গণমাধ্যমসহ সবার। যারা বাংলাদেশে গণতন্ত্র এগিয়ে নিতে চায় তাদের সবাইকে আমাদের সমর্থন জানাতেই এ ভিসানীতি।
এ টি