এনবি নিউজ : চলতি একাদশ সংসদের সর্বশেষ অধিবেশন (২৫তম) বসছে আজ। রোববার (২২ অক্টোবর) বিকেল ৪টায় শুরু হবে এই অধিবেশন। আগামী ৩১ অক্টোবর তা শেষ হতে পারে জানা গেছে। স্বল্প মেয়াদের এই অধিবেশনে সর্বোচ্চ সংখ্যক বিল পাসের সম্ভাবনা রয়েছে।
অধিবেশন বসার আগে রোববার বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদ ভবনে সংসদ ভবনে সংসদের কার্যউপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে অধিবেশনের মেয়াদ ও কার্যসূচি চূড়ান্ত হবে বলে জানিয়েছে সংসদ সচিবালয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় নিয়মিত বিরতিতেই অনেকটা নিয়মরক্ষার জন্য চলতি সংসদের অধিবেশন বসেছে। গত ১৪ সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়া ২৪তম অধিবেশন পর্যন্ত মোট ২৬২ কার্যদিবস অধিবেশন বসেছে। এর আগে, দশম সংসদ ৪১০ কার্যদিবস ও নবম সংসদ ৪১৮ কার্যদিবস চলে অধিবেশন চলে।
সংসদ সচিবালয়ের তথ্যানুযায়ী, চলতি সংসদে রেকর্ড সংখ্যক অধিবেশন বসলেও তুলনামূলক কম সংখ্যক বিল পাস হয়েছে। গত ২৪তম অধিবেশন পর্যন্ত ১৪০টি বিল পাস হয়েছে। এর আগে নবম সংসদে ২৭১টি ও দশম সংসদে ১৯৩টি বিল পাস হয়েছিল। তবে একাদশ সংসদের চলতি অধিবেশনে রেকর্ড সংখ্যক বিল পাসের সম্ভাবনা রয়েছে। গত অধিবেশনে ১৮টি বিল পাস হয়েছিল।
এবার ২৫টির মতো বিল পাস হতে পারে। বর্তমানে সংসদে পাসের অপোয় আছে ৫টি বিল। আর ১২টি বিল সংসদীয় কমিটিতে প্রক্রিধীন রয়েছে। সংসদের উত্থাপনের জন্য গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৫টি বিল সংসদ সচিবালয়ে জমা পড়েছে। এই বিলগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ হেমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিল-২০২৩, আনসার ব্যাটালিয়ন বিল-২০২৩, সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (সংশোধন) বিল-২০২৩, জেলা (পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলাসমূহে বলবৎকরণ) বিল-২০২৩ এবং নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বিল-২০২৩। এছাড়া মন্ত্রী পরিষদে অনুমোদিত আরও ৩/৪টি বিল সংসদে আসতে পারে বলে জানা গেছে।
এদিকে চলতি সংসদে রেকর্ড সংখ্যক ৩১ জনের মৃত্যু ঘটনা ঘটেছে। এমন দুঃখজনক ঘটনা অতীতের কোনো সংসদে ঘটেনি। বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বি মিয়া, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ অনেক সংসদ সদস্য মারা গেছেন। এরমধ্যে ছয়জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। সর্বশেষ গতকাল শনিবার পটুয়াখালী-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. শাহজাহান মিয়া মৃত্যুবরণ করেছেন।
আজ রোববার সংসদ স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হবে। শুরতেই স্পিকার এবং ডেপুটি স্পিকারের অনুপস্থিতি অধিবেশন পরিচালনা করার জন্য সভাপতিমণ্ডলীর মনোনয়ন দিবেন স্পিকার। এরপরই শোকপ্রস্তাব উত্থাপন করবেন তিনি। শোকপ্রস্তাবের উপর আলোচনায় অংশ নিবেন সরকারি ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা। চলতি সংসদের কোনো সদস্য মারা গেলে সংসদে তার উপর আলোচনা করার রেওয়াজ রয়েছে। এরপর রেওয়াজ অনুযায়ী ওই দিন অধিবেশন মুলতবি করা হয়।
সংসদ সচিবালয় জানায়, সংসদ সদস্যদের মৃত্যুজনিত কারণে উপনির্বাচনের সময়ও চলতি সংসদে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া কুয়েতের আদালতে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সদস্য শহীদ ইসলাম পাপুলের সাজা হওয়ায় বিদেশে নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে জড়িত থাকায় সংসদ সদস্য বাতিলের ঘটনাও প্রথম ঘটেছে।
চলতি সংসদের প্রথম বছর ২০১৯ সালে ৬১ কার্যদিবস, ২০২০ সালে ৫৩ কার্যদিবস, ২০২১ সালে ৪২ কার্যদিবস, ২০২২ সালে ৪৪ কার্যদিবস এবং চলতি বছরে ৬১ কার্যদিবস অধিবেশন বসেছে। এই সংসদের ২৫টি অধিবেশনের মধ্যে দু’টি বিশেষ অধিবেশন ছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী মুজিববর্ষ উপলক্ষে ২০২০ সালের ৮ নভেম্বর বিশেষ অধিবেশন বসে। পরের বিশেষ অধিবেশনটি ছিল চলতি বছরের এপ্রিলে। জাতীয় সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উপলে এই অধিবেশন বসে।
২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি বর্তমান সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে। আগামী ২৯ জানুয়ারি এই সংসদের ৫ বছরের মেয়াদ পূর্ণ হবে। সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদ অনুসারে, সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে ৯০ দিনের মধ্যে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। সে অনুযায়ী, আগামী পহেলা নভেম্বর থেকে নির্বাচনের দিন গণনা শুরু হবে। আর স্বাভাবিক সময়ে একটি অধিবেশন শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে পরবর্তী অধিবেশন বসার বাধ্যবাধকতা থাকলেও নির্বাচনীকালী সময়ের জন্য সেটা প্রযোজ্য নয়। ফলে চলতি অধিবেশন বর্তমান সংসদের শেষ অধিবেশন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ‘সংসদকে কার্যকর করতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। অতীতের মতো সংসদ বর্জনের পরিবর্তে বিরোধীদলীয় সংসদ-সদস্যরা সরকারের ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিতে সবসময় সোচ্চার ছিল। সংখ্যায় কম হলেও বিরোধীদলীয় সদস্যদের সংসদীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছে।’
এ বিষয়ে ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু বলেন, ‘চলতি সংসদে অধিবেশনের কার্যদিবস কম হলেও প্রতিটি অধিবেশন সংবিধান ও কার্যপ্রণালী বিধি মেনে বসেছে এবং পরিচালিত হয়েছে। সংবিধানের বাধ্যবাধকতায় কারণে করোনার ঝুঁকির মধ্যেও অধিবেশন চালাতে হয়েছে। বিরোধী দলের সংসদ বর্জনের ঘটনা ঘটেনি। ওয়াকআউটের ঘটনাও ছিল খুবই কম। এই সংসদের রেকর্ড সংখ্যক সদস্যের মৃত্যু হলেও বিরোধী দলীয় সদস্যরাসহ সকলেই সংসদে বাধাহীনভাবে আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। ফলে সংসদ ছিল পুরোপুরি কার্যকর।’