এনবি নিউজ : মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সিরাজুল আলম খানের প্রথম জানাজা ঢাকায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শনিবার সকাল ১০টায় এই জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজা শেষে সাড়ে ১০ টার পরেই তাঁর মরদেহ নোয়াখালীতে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়।
বায়তুল মোকাররমে সিরাজুল আলম খানের জানাজার আগে কথা বলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব। তিনি বলেন, ‘তাঁর ইচ্ছা, পরিবার, তাঁর গঠিত দল জেএসডির নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আলোচনা করে আজকের সিদ্ধান্ত, যাতে কোনো বিতর্ক না হয়, জানাজা শেষ করে এখনই আমরা নোয়াখালীর উদ্দেশে যাত্রা করব। উনার বাড়ি বেগমগঞ্জ চৌরাস্তার বামপাশে। ওখানে মা ও বাবার কবরের পাশে উনাকে দাফন করা হবে।’
সিরাজুল আলম ব্যক্তি, পরিবারের সম্পত্তি নন। তিনি দলের সম্পত্তি নন। সিরাজুল আলম ১৮ কোটি মানুষের সম্পত্তি বলে মন্তব্য করেন আবদুর রব। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত জীবনে সিরাজুল আলম খান কোনো সম্পত্তির লোভ লালসা করেন নাই। এ কথা বলার সময় কেঁদে ওঠেন আ স ম আবদুর রব। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ নামে একটা দেশ হবে, এটা যখন কেউ চিন্তা করেননি তখন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য নিউক্লিয়াস গঠন করেছেন। সিরাজুল আলম খান নীরবে-নিভৃতে আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছেন। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে তাঁর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করব।’
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমি দেখলাম, রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে একটা সম্মান জানিয়ে সমস্ত দায়িত্ব শেষ করে দিল। অথচ সত্যি কথা হচ্ছে সিরাজুল আলম খান না থাকলে এই স্বাধীনতা কীভাবে আসত, তা নিয়ে গবেষণার দরকার আছে। তবে আমি মনে করি, সিরাজুল আলম খান ছোট হননি।’
সিরাজুল আলম খান একসময় আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন, কিন্তু জানাজায় দলটির নেতা–কর্মীদের দেখা গেল না কেন, এমন এক প্রশ্নের জবাবে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘১৯৭২ সালে তিনি জাসদ করেছেন। আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব জন্মের পর থেকেই জাসদকে যেভাবে পেরেছে, ধ্বংস করে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। তা ছাড়া এখন পর্যন্ত সিরাজুল আলম খান এমন কিছু করেননি, ক্ষমতাসীনদের দালালি করা, চামচামি করা—এগুলো কিছু করেননি। এত বড় একজন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, এত বড় সংগঠক আরেকজন হয়তো নেই-ই, অথচ উনি বলেছেন, ‘আমাকে কোনো রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেবেন না এবং ওই সব জায়গায় নেবেন না’, যেমন শহীদ মিনারে নেওয়া গেল না। উনি এটা চাননি।’
সিরাজুল আলম খানের জানাজায় আরও অংশ নেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম, জনসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নূরুল আম্বিয়া ও সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম প্রমুখ।
গতকাল শুক্রবার বেলা আড়াইটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয় (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।তিনি উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসে সংক্রমণসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন।