এনবি নিউজ : দুই দলের প্রথম দেখায় হারের মধুর প্রতিশোধ নেওয়ার লক্ষ্য তো ছিলই। সঙ্গে ছিল টেস্টের নবীন দল আফগানিস্তানের সঙ্গে এই সংস্করণে শক্তির পার্থক্য তুলে ধরার চ্যালেঞ্জ। সেটা ভালোভাবেই করতে পেরেছে বাংলাদেশ। আফগানদের গুঁড়িয়ে দিয়ে পেয়েছে নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয়।
মিরপুরে একমাত্র টেস্টে ৫৪৬ রানে জিতেছে বাংলাদেশ। এই সংস্করণে রানের দিক থেকে এর চেয়ে বড় জয় আছেই কেবল কেবল দুটি। ১৯২৮ সালে অস্ট্রেলিয়াকে ৬৭৫ রানে হারিয়েছিল ইংল্যান্ড। ১৯৩৪ রানে ইংলিশদের ৫৬২ রানে হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া।
রানের দিক থেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয় ছিল ২২৬ রানের, ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। এই সংস্করণে সেটাই বাংলাদেশের প্রথম জয়।
৬৬২ রানের ‘অসম্ভব’ লক্ষ্য তাড়ার কোনো চেষ্টাই করতে পারেনি আফগানিস্তান। তাসিকন আহমেদ ও শরিফুল ইসলামের দুর্দান্ত বোলিংয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে গেছে কেবল ১১৫ রানে। এর আগে প্রথম ইনিংসে করতে পেরেছিল কেবল ১৪৬ রান।
চতুর্থ দিন শেষেই বড় জয়ের সুবাস পাচ্ছিল বাংলাদেশ। শেষ ২ দিনে তাদের প্রয়োজন ছিল ৮ উইকেট, আফগানদের প্রয়োজন ছিল আরও ৬১৭ রান।
সফরকারীদের জয়ের বাস্তবিক কোনো সুযোগ ছিল না। দেখার ছিল দুই দলের প্রথম দেখায় ২০১৯ সালে চট্টগ্রাম টেস্টে ২২৪ রানে জেতা দলটি কতটা লড়াই করতে পারে। স্বাগতিকদের দারুণ বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে সেটা খুব একটা করতে পারেনি তারা। গুটিয়ে গেছে এক সেশনেই।
৭০ রান যোগ করতে শেষ ৮ উইকেট হারিয়েছে আফগানিস্তান। এর মধ্যে ১১ নম্বরে নামা জহির খান মাঠ ছাড়েন তাসকিন বলে হাতে চোট পেয়ে। সফরকারীদের ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে সেখানেই।
শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শনিবার ২ উইকেটে ৪৫ রান নিয়ে দিন শুরু করে আফগানিস্তান। আগের দিন শেষ বেলায় দৃঢ়তা দেখানো নাসির জামালকে শুরুতেই ফিরিয়ে দেন ইবাদত হোসেন। উইকেটের পেছনে সহজ ক্যাচ নেন সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে এই ম্যাচে দলকে নেতৃত্ব দেওয়া লিটন দাস।
পরপর দুই ওভারে আফসার জাজাই ও বাহির শাহকে ফিরিয়ে আফগানদের লড়াইয়ের আশা প্রায় শেষ করে দেন শরিফুল। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৬৫’র বেশি গড়ে রান করা বাহির নেমেছিলেন হাশমতউল্লাহ শাহিদির কনকাশন সাব হিসেবে। আগের দিন হেলমেটে তাসকিনের বাউন্সারে আঘাত হানলে মাঠ ছেড়েছিলেন আফগান অধিনায়ক।
একটু দেরিতে আক্রমণে আসা তাসকিন ও মেহেদী হাসান মিরাজ সারেন বাকিটা। তাসকিন শিকার শুরু করেন এক প্রান্ত আগলে রাখা রহমত শাহর প্রতিরোধ ভেঙে। অফ স্টাম্পের একটু বাইরের বলে খোঁচা মেরে লিটনের গ্লাভসে ধরা পড়েন আফগান টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান।
দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে করিম জানাতের স্টাম্প উপড়ে ফেলেন তাসকিন। আমির হামজাকে ফিরিয়ে দলকে জয়ের আরও কাছে নিয়ে যান মিরাজ।
ইয়ামিন আহমাদজাইকে বিদায় করে প্রথমবারের মতো পাঁচ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়ার আশা জাগান তাসকিন। সেটি হতে দেননি জহির। পরপর দুই বলে দুটি সফল রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি। এর একটিতে ফুলটস ডেলিভারিতে হন বোল্ড কিন্তু কোমড়ের বেশি উচ্চতার জন্য আম্পায়ার ডাকেন ‘নো।’
এর দুই বল পরেই সমাপ্তি ঘটে আফগানিস্তানের ইনিংসের। লেগ স্টাম্পে থাকা তাসকিনের শর্ট বল আঘাত হানে জহিরের কনুইয়ে। এরপর আর ব্যাটিং চালিয়ে যেতে পারেননি তিনি।
প্রথম ইনিংসে ৩৯ ওভার টিকেছিল আফগানিস্তান। ম্যাচ বাঁচানোর ভীষণ কঠিন লড়াইয়ে নেমে এবার ব্যাট করতে পারল কেবল ৩৩ ওভার। দুই ইনিংস মিলিয়ে তাদের রান কেবল ২৬১। জোড়া সেঞ্চুরিতে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতা নাজমুল হোসেন শান্ত একাই করেন ২৭০ রান।
আফগানদের হতাশার ম্যাচে বাংলাদেশের প্রাপ্তি আছে আরও। ২৬ মাস ও ২৬ ইনিংস পর সেঞ্চুরি করেছেন মুমিনুল হক। প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট নিয়েছেন পেসার ইবাদত। দ্বিতীয় ইনিংসে ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ৩৭ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন তাসকিন।
মিরপুর টেস্টে দুই ইনিংস মিলিয়ে বাংলাদেশের পেসাররা নিয়েছেন ১৪ উইকেট। যা এই সংস্করণে এক ম্যাচের তাদের সর্বোচ্চ। আগের সেরা ছিল গত বছর মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৩ উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৩৮২
আফগানিস্তান ১ম ইনিংস: ১৪৬
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ৪২৫/৪ ইনিংস ঘোষণা
আফগানিস্তান ২য় ইনিংস: ১১৫ (আগের দিন ৪৫/২) (রহমত ৩০, শাহিদি ১৩ আহত অবসর, জামাল ৬, জাজাই ৬, বাহির ৭, জানাত ১৮, হামজা ৫, আহমাদজাই ১, মাসুদ ৪*, জাহির ৪ আহত আউট; শরিফুল ১০-১-২৮-৩, তাসকিন ৯-২-৩৭-৪, তাইজুল ৫-১-১৯-০, মিরাজ ২-০-৫-০, ইবাদত ৭-২-২২-১)
ফল: বাংলাদেশ ৫৪৬ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: নাজমুল হোসেন শান্ত