এনবি নিউজ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার অংশগ্রহণমূলক দুর্যোগ সহনশীল ভবিষ্যৎ গড়তে দুর্যোগ প্রশমনে কাজ করে যাচ্ছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের সক্ষমতা বেড়েছে।
শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) ‘আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস’ উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও ‘আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস’ পালিত হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য- ‘অসমতার বিরুদ্ধে লড়াই করি, দুর্যোগ সহনশীল ভবিষ্যৎ গড়ি’ অত্যন্ত সময়োপযোগী হয়েছে বলে আমি মনে করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টেকসই ও সমন্বিত দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাস কর্মসূচি প্রণয়নের পথিকৃৎ। স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১৯৭৩ সালে দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাসে আগাম সতর্কবার্তা উপকূলীয় এলাকার জনগণের মধ্যে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান ‘ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি)’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৫ সালে বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে তিনি দুর্যোগ মোকাবিলার উন্নত টেলিযোগাযোগ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। জাতির পিতা ঘূর্ণিঝড় থেকে জনগণের জানমাল রক্ষায় সেই সময় উপকূলীয় অঞ্চলে ১৭২টি উঁচু মাটির কিল্লা তৈরি করেন, যা ‘মুজিব কিল্লা’ নামে পরিচিত।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাসে ও দুর্যোগ সহনশীল দেশ গঠনে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। দুর্যোগের আগাম সতর্কবার্তা ও দৈনন্দিন আবহাওয়া বার্তা জানতে মোবাইলে ১০৯০ (টোল ফ্রি) ইন্টারএ্যাকটিভ ভয়েস রেসপন্স (আইভিআর) সেবা চালু করা হয়েছে। দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতেও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিপদাপন্ন জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি কর্মচারী, জনপ্রতিনিধি, স্বেচ্ছাসেবক, শিক্ষক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও বিভিন্ন পর্যায়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, নারী, প্রবীণ নাগরিক ও শিশুসহ সকল স্তরের জনগণের দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাসের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট আইনি কাঠামো ও নির্দেশিকায় অন্তর্ভুক্তিমূলক ঝুঁকিহ্রাস এবং সাড়াদান কার্যক্রমের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিপদাপন্ন জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা বৃদ্ধি, দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাস এবং তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চলমান রাখার লক্ষ্যে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ, অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান ও ভিজিএফ কর্মসূচি ইত্যাদি বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রস্তুতি তথা দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাস কার্যক্রম জোরদার করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় অবকাঠামোগত উন্নয়নের অংশ হিসেবে গৃহহীনদের জন্য নির্মিত হয়েছে দুর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ। বজ্রপাতে প্রাণহানি রোধকল্পে বজ্রপাতপ্রবণ এলাকায় বজ্রনিরোধক দন্ড স্থাপন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় সরকারের বিনিয়োগ, দুর্যোগের পূর্বাভাস ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, নতুন বহুমুখী আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ এবং দুর্যোগের প্রস্তুতি ও উদ্ধার কার্যক্রমে স্বেচ্ছাসেবীদের নিবেদিত প্রচেষ্টাসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের ফলে সম্প্রতি যেকোনো দুর্যোগে প্রাণহানির সংখ্যা ব্যাপকহারে হ্রাস পেয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে উপকূলে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি)-তে আমাদের ৭৬ হাজার ১৪০ জন প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে; যার অর্ধেকই নারী। নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার ফলে দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাস ব্যবস্থাপনায় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। এ কারণে জেন্ডার রেসপনসিভ ক্যাটেগরিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্মানসূচক ‘জাতিসংঘ জনসেবা পদক- ২০২১’ অর্জন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতি, সম্পদ, সম্ভাবনাকে বিবেচনায় নিয়ে প্রণীত ১০০ বছরের দীর্ঘমেয়াদি ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’তে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, সবার সমন্বিত প্রচেষ্টা ও অংশগ্রহণের মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা দুর্যোগ সহনশীল, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত-সমৃদ্ধ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়তে সমর্থ হবো, ইনশাল্লাহ।’
Jagonews24 Google News Channelজাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন আমাদের গুগল নিউজ চ্যানেল।
তিনি ‘আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস-২০২৩’ উপলক্ষে গৃহীত সব কর্মসূচির সাফল্য কামনা করেন।
বিজ্ঞাপন