বিএসএফের গুলিতে হত্যার শিকার রইশুদ্দিনের লাশ ২ দিনেও ফেরত আসেন
আজকের কথা ডেক্স,বেনাপোল (যশোর):: যশোরের বেনাপোল সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফের গুলিতে রহিস উদ্দীন নামে বর্ডার বার্ড বিজিবির এক সিপাহী হত্যার শিকার হয়েছেন। তিনি ৪৯ ব্যাটালিয়ন বিজিবির বেনাপোল সীমান্তের ধাণ্যখোলা জেলেপাড়া বিজিবি ক্যাম্পে কর্মরত ছিলেন।
সে চাপায়নবাবগঞ্জে শিবগঞ্জ উপজেলার
শ্যামপুর গ্রামের কামরুজ্জামানের ছেলে। ২০১৩ সালে তিনি বিজিবিতে চাকুরী নেন। এ ঘটনায় তার পরিবারে চলছে শোকের মাতম।
এদিকে ধরে নিয়ে হত্যার ঘটনার ২ দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত মরদেহ ফেরত দেয়নি বিএসএফ। তবে হত্যার ঘটনায় বিজিবি,বিএসএফ পতাকা বৈঠকে মরদেহ ফেরত ও হত্যার প্রতিবাদ এবং সুষ্ট তদন্তের দাবি জানিয়েছে বিজিবি। এ ঘটনায় সীমান্তে উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিজিবির উধ্বতন কর্মকর্তারা সীমান্ত পরিদর্শন করেছেন।
সোমবার(২২ জানুয়ারি) ভোর ৫ টার দিকে গুলিতে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে।
বিজিবি সদস্য হত্যার ঘটনায় বেনাপোলের ঘিবা গ্রামের আব্দুল বারি জানান, তিনি ভোর রাতে পর পর ৭ রাউন্ড গুলির শব্দ পান। পরে ভোরে লোা মুখে শুনতে পান এক বিজিবি সদস্যকে বিএসএফ ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করেছে। এটি দুঃখ জনক ঘটনা।
সীমান্ত বাসী করিম জানান, এর আগেও সীমান্তে বিএসএফের নির্যাতনে বাংলাদেশি হত্যা ও ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে আমাদের আতঙ্কে থাকতে হয়।
এ ঘটনায় উৎসুক জনতার মধ্যে একজন আমির হোসেন জানান, বিএসএফের হাতে বিজিবি সদস্য হত্যার ঘটনা শুনছি। বাংলাদেশি নাগরীক হিসাবে নিন্দা জানাচ্ছি।
৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃকর্ণেল জামিল আহম্মেদ প্রেস লিস্ট দিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, ২২ জানুয়ারি আনুমানিক সাড়ে পাঁচটার দিকে বিজিবি যশোর ব্যাটালিয়নের ধান্যখোলা বিওপি’র জেলেপাড়া পোস্ট সংলগ্ন এলাকায় ভারত থেকে আসা একদল গরু চোরাকারবারীদের সীমান্ত অতিক্রম করে আসতে দেখলে দায়িত্বরত: বিজিবি টহল দল তাদের চ্যালেঞ্জ করলে তারা দৌড়ে ভারতের দিকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় বিজিবি টহল দলের সদস্য সিপাহী মোহাম্মদ রইশুদ্দীন চোরাকারবারীদের পিছনে ধাওয়া করতে করতে ঘন কুয়াশার কারণে দলবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে । প্রাথমিকভাবে তাকে খুঁজে পাওয়া না গেলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যায় সে বিএসএফের গুলিতে আহত হয়ে ভারতের অভ্যন্তরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ঘটনার পরপরই এ বিষয়ে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক করা হয় এবং জানা যায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় উক্ত সৈনিক মৃত্যুবরণ করেছে। এ বিষয়ে বিএসএফ কে বিষয়টির ব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানানোর পাশাপাশি কূটনৈতিকভাবে তীব্র প্রতিবাদ লিপি প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়াও মৃতদেহ বাংলাদেশে দ্রুত ফেরত আনার বিষয়ে সব পর্যায়ে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।
এই বিষয়ে জেলা নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সমান্বয়ক শেখ মাসুদুজ্জামান মিঠু বলেন, ‘ভারত সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের গভীর সুসম্পর্ক রয়েছে। সীমান্তে যে ঘটনাটি ঘটেছে এটা নিন্দাজনক ঘটনা। দুই সরকারই সীমান্তের হত্যাকে জিরো পর্যায়ে নিয়ে আসে। এমন একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে গেছে। আমরা আশা করছি, দুই সরকারই বসে এটা নিরসন করবে। এটা নিয়ে দুদেশের কোন বৈরিতা পরিবেশ সৃষ্টি হবে না। এটা নিয়ে কোন উত্তেজনাও সৃষ্টি হোক সেটাও আমরা আশা করি না।
এদিকে সীমান্ত হত্যা বন্ধে দফায় দফায় পতাকা বৈঠক ছাড়াও দু’দেশের উচ্চ পর্যায়ের সীমান্ত বৈঠক হয় সময়। এসব বৈঠকে হত্যা ও নির্যাতন বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিলেও কোনোটাই রক্ষা করেনি বিএসএফ। একের পর এক ঘটছে হত্যার ঘটনা।
এছাড়া ২০১৮ সালের ৯ মার্চ যশোরের বেনাপোল সীমান্তের বিপরীতে ভারতের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বনগাঁও সীমান্তে ৬৪ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের কাল্যানী বিওপির দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকায় ‘ক্রাইম ফ্রি জোনের’ উদ্বোধন করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতের বর্ডার সিকিউরিরিটি ফোর্স (বিএসএফ)। চোরাচালান, নারী ও শিশু পাচার, মানব পাচার, মাদক, অস্ত্র ও বিস্ফোরক পাচার এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মত আন্তঃসীমান্ত অপরাধ বন্ধ করাই এ জোন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য।তবে সেখানে কাঙ্খিত সফলতা এপর্যন্ত আসেনি।