আজকের কথা ডেস্ক(বেনাপোল) ভারত: চার দিনের ব্যবধানে আবারো পাচারের সময় বেনাপোল কাস্টমস পেরিয়ে ভারতের পেট্রাপোল কাস্টমসে এক কেজি স্বর্নবারসহ তিন বাংলাদেশিকে আটক করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফ।
বৃহস্পতিবার(২২ ফেব্রূয়ারি) বিকালে ভারতের ১৪৫ ব্যাটালিয়নের সীমান্তরক্ষী বিএসএফ এক বার্তায় আটকের এ তথ্য গণমাধ্যমকর্মীদের জানায়।
এর আগে গত বুধবার(২১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় বেনাপোল কাস্টমস পেরিয়ে ওপারে ভারতের পেট্রাপোল কাস্টমস ইমিগ্রেশনে নিরাপত্তায় নিয়োজিত সীমান্তরক্ষী বিএসএফ সদস্যদের হাতে এরা আটক হয় । আটককৃতরা তাদের শরীরে(পায়ু পথে) স্বর্ন বহন করছিল। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে পেট্রাপোল থানা পুলিশে সোপর্দ্য করা হয়েছে।
আটককৃতরা হলেন, শরীয়তপুরের চিকান্দী উপজেলার বিনোদপুর গ্রামের রাজ্জাক মুন্সীর ছেলে আবু বক্কর মুন্সী,
ঢাকার ওয়াদালোদী তুরাগ এলাকার রুস্তম শেখের মেয়ে
পারভীন আক্তার, (৪৪) ও মানিকগঞ্জের সদর এলাকার তারা গ্রামের পিয়ার আলীর ছেলে সাইফুল ইসলাম এমডি (৪৬) ।
এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারী আড়াই কেজি ওজনের ২২ টি স্বর্নবারসহ আমদানি পণ্যবাহী ভারতীয় ট্রাক চালক রাজু দাস, সঞ্জিব দাসকে আটক করে বিএসেফ। একই দিনে পাসপোর্টধারী যাত্রী রিবাউদ্দিনকে ৩ টি স্বর্নবারসহ আটক করে বিএসএফ। এছাড়া গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ৮৫০ গ্রাম ওজনের স্বর্ণের বারসহ আবু বক্কর হানিফা ও জিয়া উদ্দীন নামে দুই ভারতীয় পাসপোর্টধারীকে আটক করে বিএসএফ। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি নাজরীন নাহার নামে এক বাংলদেশি পাসপোর্টধারী পায়ুপথে লুকিয়ে পাচারের সময় ৪ পিস স্বর্ণের বারসহ তাকে আটক করে বিএসএফ।
ভারতের ২৪ পরগনা সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ারের পাবলিক রিলেশন অফিসার ডিআইজি শ্রী এ কে আর্য সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা কোনো অবস্থাতেই সীমান্তে চোরাচালান বা অন্য কোনো ধরনের অপরাধ ঘটতে দেবে না। এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদেরও ছাড় দেবে না বিএসএফ। চোরাচালান প্রতিরোধে সজযোগীতা কামনা করে বিএসএফ কর্মকর্তা।
জানা যায়, বেনাপোল কাস্টমসের দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে স্বর্ণ পাচারের ‘গোল্ডেন রুট’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বেনাপোল স্থলবন্দর। তবে, স্বর্ণ নিয়ে নির্বিঘ্নে বেনাপোল পার হয়ে গেলেও, পেট্রাপোলে গিয়ে প্রায় প্রতিদিন ধরা পড়ছে চোরাকারবারিরা। এদিকে পাচার রোধে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ আরো জোরালো পদক্ষেপ নিলেও বাংলাদেশ কাস্টমসে এনিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নেই। অভিযোগ উঠেছে এসব পাচারে কার্যক্রমে কাস্টমসের নিরাপত্তা কর্মীদের সাথে চোরাকারবারীদের সখ্যতা থাকতে পারে। যার কারনে স্ক্যানিং মেশিন মেরামত বা যাত্রীর ব্যাগেজ তল্লাশীতে অনিহা রয়েছে।
আরো জানা গেছে, বেনাপোল বন্দর দিয়ে বাণিজ্য ও যাত্রী যাতায়াতের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ৪ টি স্ক্যানিং মেশিন স্থাপন করে। এর একটি মোবাইল স্ক্যানার স্থাপন হয় বন্দরের বাইপাস সড়কে পণ্য প্রবেশ দ্বারে। অত্যাধুনিক মেশিনটি পণ্যবাহী ট্রাকে আসা রাসায়নিক, মাদক, অস্ত্র ও মিথ্যা ঘোষণার পণ্য শনাক্ত করতে সক্ষম।
এছাড়া বেনাপোল চেকপোস্ট ও রেল স্টেশন আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন- কাস্টমস রুটে চোরাচালান রোধে আরও ৩টি স্ক্যানিং মেশিন বসানো হয়। স্ক্যানিং মেশিনটি কাস্টমসের পক্ষে পরিচালনা করে আসছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ফাইবার অ্যাসোসিয়েটস। তবে স্ক্যানিং মেশিনগুলোর মধ্যে ৩ টি যান্ত্রিক ত্রুটিতে পড়ায় গেল ৪ মাস ধরে স্ক্যানিং কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে এপথে। এতে অবাধে আমদানি পণ্য ও পাসপোর্ট যাত্রীর মাধ্যমে স্বর্ণ ও মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে চোরাচালান ব্যাপক হারে বেড়েছে। এছাড়া ঢাকা-কলকাতা রুটে যাত্রী নিয়ে চলাচলকারী পরিবহনের অনেকেই জড়িয়ে পড়ছে চোরাচালানে।
বেনাপোল কাস্টমসের পক্ষে স্ক্যানিং মেশিন তদারকিতে নিযুক্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ফাইবার অ্যাসোসিয়েটসের বেনাপোল অফিস ব্যবস্থাপক বনি আমিন জানান, স্ক্যানিং মেরামত করতে বড় অংকের অর্থের প্রয়োজন। সেটি চুক্তি অনুযায়ী কাস্টমস ব্যয় বহন করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় স্ক্যানিং ৩টির কার্যক্রম বন্ধ আছে।