আজকের কথা ডেস্ক(যশোর): যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর অভ্যন্তরে মাদক কারবারীরা আবারও সক্রীয় হয়ে উঠেছে। আনসার,পিমা,আর্মড ব্যাটালিয়ন পুলিশ এই তিন নিরাপত্তা সংস্থ্যার চোখে ধুলো দিয়ে বার বার মাদক পাচারের ঘটনা ঘটছে। এতে নিরাপদ বানিজ্য হুমকির মুখে পড়ায় হয়রানির আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে উঠেছে সাধারন ব্যবসায়ীরা।
সব শেষ গত বুধবার ( ২৩ অক্টোবর) রাত ১১ টার দিকে বেনাপোল পোর্ট থানায় একটি মাদক পাচারের ঘটনায় অজ্ঞাত আসামী দেখিয়ে মামলা দায়ের হয়েছে। এদিন বিকালে বন্দরের ৫ নাম্বার গেটে চোরাকারবারীকে ধাওয়া করে ৪৯ বোতল ফেনসিডিল জব্দ করেছে বন্দরের নিরাপত্তা কর্মী আনসার সদস্যরা। তবে এসময় কৌশলে পালিয়ে যায় পাচারকারী। জব্দকৃত ফেনসিডিল পরবর্তী পদক্ষেপ মাদক দ্রব নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর আইনি ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে জানা গেছে।
বেনাপোল বন্দরের নিরাপত্তা সংস্থ্যা আনসার পিসি হেলালুজ্জামান জানান, তাদের নিরাপত্তাকর্মীরা বন্দরে টহল দেওয়ার সময় দেখতে পান একটি ট্রাকের পাশে সন্দেহ ভাজনরা ঘোরাঘুরি করছে। পরে তাদের ধাওয়া করলে একটি ব্যাগ ফেলে কৌশলে পালিয়ে যায়। পরে ব্যাগের মধ্যে থেকে ৪৯ বোতল আমদানি নিষিদ্ধ ফেনসিডিল পাওয়া যায়। বন্দর কর্মকর্তাদের নির্দেশে ফেনসিডিল মাদক দ্রব নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে বন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও পাচার রোধে বন্দরে ১৭৫টি অত্যাধুনিক সিসি ক্যামেরা পুরা বন্দরে লাগানো হয়েছে। তবে তদারকির গাফিলতায় প্রকাশ্যে বন্দর অভ্যন্তরে মাদক পাচারের ঘটনা ঘটলেও অপরাধী সনাক্তে ব্যর্থ হচ্ছেন সিসি ক্যামেরা তদারকিতে থাকা বন্দর সংশিষ্টরা।
বেনাপোল ট্রাক ট্রান্সপোর্ট ইউনিয়নের সেক্রেটারী আজিম উদ্দীন গাজী বলেন, চোরাকারবারীরা কখনো ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাকে আবার কখনো সীমান্ত পথে ফেনসিডিল নিয়ে বন্দর এলাকায় অবস্থান করে। পরে কৌশলে বিভিন্ন পণ্যবাহী বাংলাদেশি ট্রাকের মাথায় ফেনসিডিল তুলে দেয়। আর হয়রানির শিকার হয় চালক,আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ীরা। বন্দর তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করলে মাদক পাচার বন্ধ হবে ও ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
বেনাপোল আমদানি,রফতানি সমিতির সহসভাপতি উজ্বল বিশ্বাস জানান, প্রায় ৯ মাস হচ্ছে বন্দরের ৩ টি স্কানিং মেশিন নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। যার কারনে সহজে মাদক বন্দরে প্রবেশ করে পরে বাংলাদেশি ট্রাকের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরে ছড়াচ্ছে। স্ক্যানিং মেশিন দ্রুত চালু করা দরকার।
উল্লেখ্য, বেনাপোল বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় বন্দরের নিজস্ব সম্পদও চুরি ঘটনা ঘটছে। চলতি সপ্তাহে বন্দরের ডিটিএম অফিসে লাগানো দুটি ফিঙ্গার প্রিন্ট মেশিন চুরি হয়। তবে স্থানটি সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকলেও অপরাধী সনাক্ত হয়নি। তবে এ চুরির ঘটনায় নিরাপত্তা সংস্থ্যা পিমার সদস্যদের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ করে বন্দর প্রশাসন পুলিশে অভিযোগ দায়ের করে।
বর্তমানে বন্দরের নিরাপত্তায় ১৬৩ জন আনসার, ৪২ জন আর্মড ব্যাটালিয়ন পুলিশ ও বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থ্যা পিমার ১২৯ জন কর্মী আছেন। এছাড়া সার্বক্ষিনক বন্দরের বানিজ্যিক কার্যক্রম গতিবিধীর জন্য ৩৭৫টি সিসি ক্যামেরা পুরো বন্দরের চারিপাশ ও পণ্য পণ্য প্রবেশ দ্বারে লাগানো হয়েছে। এছাড়া সরকারের গোয়েন্দা সংস্থ্যারও সিসি ক্যামেরা বাণিজ্য পর্যবেক্ষন করছে।
বেনাপোল ও পেট্রাপোল বন্দরের দূর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারনে কারনে গত ০২ জুলায় বন্দরের কাঁচামালের ইয়ার্ডে ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ট্রাকে কাস্টমস,বিজিবি ও পুলিশের যৌথ অভিযান চালিয়ে ৯৯ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার করে।
২০২২ সালের ১৫ জুন যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরে ভারতীয় পণ্যবাহী একটি ট্রাকে তল্লাশি চালিয়ে ৭৪৯ বোতল ফেনসিডিল, ১৮৬ কেজি গাঁজা ও আমদানি নিষিদ্ধ মেডিসিন, কসমেটিকস ও আতশবাজি আটক করে পোর্টথানা পুলিম।
২০২১ সালের ১৩ জানুয়ারী ভারত থেকে আমদানিকৃত একটি পন্যবাহী ট্রাক থেকে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় ওষুধ ও ২০০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ এ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি সাজেদুর রহমান জানান, বন্দরের সিসি ক্যামেরা যদি নিয়মিত তদারকি করা হয় এবং বন্দরের নিরাপত্তা কর্মীরা যদি দায়িত্বশীল হয়ে কাজ করে তবে বন্দর অভ্যন্তরে মাদকের কারবার বন্দর করা সহজ হবে।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক( ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার জানান, বন্দরের যে স্থানটি থেকে ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে সেখানে সিসি ক্যাসেরা ছিলনা। তাই অপরাধী সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে এসব ঘটনা এড়াতে বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।