রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের শহরটি ওয়াগনারের বিদ্রোহের কেন্দ্রে ছিল। ওয়াগনার সৈন্যরা শনিবার (২৪ জুন) ভোরে শহরে প্রবেশ করে এবং আঞ্চলিক সামরিক কমান্ডের সদর দপ্তর দখল করে।
এরপর সারা দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিস্ফোরণ ও গোলাগুলি চালানোর নানা গুঞ্জনে মুখরিত ছিল। শহরের কেন্দ্রস্থলে ওয়াগনার সৈন্যদের অবস্থান নেওয়ার ভিডিও ছড়িয়েছিল। এছাড়া চেচেন সৈন্যরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য এগিয়ে আসছে বলেও শোনা যাচ্ছিল।
পরে বেলারুশের প্রেসিডেন্টের আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় রুশ বাহিনীর সঙ্গে চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে ওয়াগনার বাহিনী রোস্তভ ছেড়ে চলে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
এর আগে শনিবার শুরুর দিকে শহরের বাসিন্দাদের গভর্নর বাইরে ভ্রমণ না করতে এবং যদি সম্ভব হয়, শহরে ওয়াগনার বিদ্রোহের পরে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে না যেতে আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু, সন্ধ্যায় সেই উত্তেজনা কমে গেছে। টেলিগ্রামে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন পোস্টের ভিডিওতে ওয়াগনার সৈন্যরা স্থানীয়দের সঙ্গে করমর্দন করতে এবং তাদের সাঁজোয়া যানগুলো ফিরিয়ে নিতে দেখা যায়।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানায়, ওয়াগনার প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন বেলারুশ চলে যাবেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, রক্তপাত এড়াতে রাশিয়ার কর্মকর্তারা প্রিগোজিন ও তার ওয়াগনার বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া থেকে বিরত থাকবে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের প্রেস সেক্রেটারি দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনারের সৈন্যরা রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে চেয়েছে। এছাড়া এই বিদ্রোহে অংশ নেওয়া যোদ্ধাদের বিচার করা হবে না।
ওয়াগনারের বিদ্রোহ ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানকে প্রভাবিত করবে না বলেও জানান ক্রেমলিনের প্রেস সচিব পেসকভ। তিনি বলেন, ভাড়াটে বাহিনীর প্রত্যাহার করা এই বিদ্রোহ কিয়েভের বিরুদ্ধে রাশিয়ার অভিযানকে প্রভাবিত করার কোনো প্রশ্নই আসে না।
ওয়াগনার প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন এর আগে জানিয়েছিলেন, তার ২৫ হাজার যোদ্ধা প্রেসিডেন্ট পুতিনকে চ্যালেঞ্জ করতে প্রস্তুত। ইউক্রেন থেকে সীমান্ত পেরিয়ে তার সৈন্যদের বহর মস্কোর দিকে যাচ্ছে।
তবে ওয়াগনার সৈন্যরা তাদের মস্কোর দিকে অগ্রযাত্রা থামিয়ে দিয়েছে এবং অনেককে তাদের অবস্থান ছেড়ে যেতে দেখা গেছে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের সময় ওয়াগনার যোদ্ধারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ভাড়াটে সৈন্যদের যারা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে চায় এবং আজকের বিদ্রোহে যারা অংশ নিয়েছে, তাদের বিচার করা হবে না।
ওয়াগনার যোদ্ধারা রোস্তভের সামরিক সদর দপ্তর ছেড়ে যাওয়ার সময় শহরের বাসিন্দারা ‘ওয়াগনার! ওয়াগনার!’ বলে স্লোগান দিতে দেখা গেছে। এটি ভাড়াটে সৈন্যদের প্রতি তাদের সমর্থন প্রকাশ করে। তবে ইউক্রেনে ওয়াগনার যোদ্ধাদের কর্মকাণ্ডের জন্য নাকি বিদ্রোহ বাতিল করার জন্য বাসিন্দারা তাদের প্রতি সমর্থন দেখাচ্ছে, তা পরিষ্কার নয়।
এদিকে, সংবাদমাধ্যমের ছবিতে ওয়াগনার প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিনকে রোস্তভ শহর ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। শহরের আঞ্চলিক সামরিক সদর দপ্তর থেকে নিজেই গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি।
রোস্তভের আঞ্চলিক গভর্নর বলেন, শহর দখল করার ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে ওয়াগনার যোদ্ধারা রোস্তভ ছেড়ে চলে গেছে এবং তাদের ফিল্ড ক্যাম্পে ফিরে গেছে।
রাশিয়ার বার্তা সংস্থা তাস জানায়, ওয়াগনার বাহিনীর পিছু হটার কারণে ফেডারেল রোড এজেন্সি দেশটির মোটরওয়েতে আগে দেওয়া সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। রোস্তভ, লিপেটস্ক, ভোরোনেজ ও তুলা অঞ্চলসহ গত ২৪ ঘণ্টা ধরে রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চল থেকে মস্কো যাওয়ার রাস্তাগুলো বন্ধ ছিল।
এদিকে, ২৪ ঘণ্টার এই অবিশ্বাস্য বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির পরে রাশিয়ার দিকে খুব গভীর মনোযোগ রাখছে ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্র দেশগুলো। এক বিবৃতিতে পেন্টাগন জানায়, মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড জে অস্টিন গত কয়েক ঘণ্টা ধরে কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, পোল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। পরিস্থিতি ক্রমশ বদলাতে থাকায় মিত্র ও অংশীদার সঙ্গে বিষয়টি ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বয় করবে যুক্তরাষ্ট্র। অস্টিন আরও বলেন, ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন পরিবর্তন হবে না।
এছাড়া কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো শনিবার (২৪ জুন) রাশিয়ার উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেছেন বলে তার কার্যালয় জানিয়েছে।