০৭:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫

রপ্তানির বিকল্প পথ কমল, বাড়বে চাপ

ডেস্ক নিউজ

ভারতের কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহার করে এত দিন বিশ্বের ২৩টি দেশে রপ্তানি হয়ে আসছিল বাংলাদেশের পণ্য। বাংলাদেশকে একটানা প্রায় সাড়ে ছয় বছর দেওয়া এই সুবিধা গত বুধবার প্রত্যাহার করেছে ভারত। তাতে আকাশপথে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাড়তি চাপ তৈরি হবে বলে আশঙ্কা করছেন পোশাক রপ্তানিকারকেরা।

বেনাপোল স্থলবন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে ভারত এই সুবিধা দেওয়ার পর গত মঙ্গলবার পর্যন্ত বাংলাদেশের ৬২৪টি প্রতিষ্ঠান সড়কপথে বেনাপোল থেকে কলকাতা বিমানবন্দর দিয়ে পণ্য রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে সিংহভাগই পোশাক শিল্পপ্রতিষ্ঠান, সংখ্যায় ৬০৬। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশের প্রায় ৯৮ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে।

রপ্তানিকারকেরা বলছেন, আকাশপথে পণ্য পরিবহনে ঢাকার চেয়ে কেজিতে ৫০ সেন্ট থেকে ১ ডলার খরচ কম হয় কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহারে। আবার ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে জটের কারণেও দ্রুত পণ্য পরিবহনে কলকাতা বিমানবন্দরের ব্যবহার বাড়ছিল। ভারত এই সুবিধা বাতিল করায় পোশাক রপ্তানিতে বিকল্প একটি পথ হাতছাড়া হলো বাংলাদেশের। এতে বাড়তি চাপ তৈরি হতে পারে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও রপ্তানিকারক সূত্রে জানা যায়, গত বছর বেনাপোল হয়ে কলকাতা বিমানবন্দর দিয়ে প্রায় ৪৪ হাজার টন পণ্য রপ্তানি হয়েছে। ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল হওয়ায় সামনে একই পরিমাণ পণ্য শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে পরিবহন করতে হবে। আকাশপথে মাঝারি আকারের উড়োজাহাজে পরিবহন করা যায় ৬০ টন পণ্য। সেই হিসাবে এসব পণ্য পরিবহনে দরকার হবে অন্তত ৭৩০টি বাড়তি ফ্লাইট। রপ্তানিকারকদের শঙ্কা, বাড়তি চাপের কারণে ঢাকার আকাশপথে ইউরোপ-আমেরিকায় পণ্য পরিবহনে ভাড়া বাড়তে পারে। আবার জটও তৈরি হতে পারে।

বেনাপোল কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, ভারতের দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধায় সবচেয়ে বেশি পোশাক রপ্তানি করেছে নারায়ণগঞ্জের ফকির ফ্যাশন। প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৭ কোটি ডলারের পৌনে ৫ হাজার টন পণ্য রপ্তানি করেছে। সর্বশেষ গত সোমবার বেনাপোল বন্দর দিয়ে সড়কপথে কলকাতা বিমানবন্দরে প্রতিষ্ঠানটির একটি চালান স্পেনে পাঠানো হয়েছে।

গত বছরের জুলাই মাসে চট্টগ্রামের ইস্টার্ন অ্যাপারেলসের চারটি চালান বেনাপোল হয়ে সড়কপথে কলকাতা বন্দর দিয়ে সুইডেনে রপ্তানি হয়। কেন বিদেশি ক্রেতা কলকাতার বিমানবন্দর ব্যবহার করেছে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসির উদ্দিন চৌধুরী  বলেন, সে সময় ঢাকার চেয়ে আকাশপথে কলকাতার ভাড়া কেজিতে ৫০ সেন্ট কম ছিল। আবার ঢাকায় বুকিং পেতে দেরি হচ্ছিল। এ জন্য বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান খরচ কমাতে ও কম সময়ে পণ্য নেওয়ার জন্য কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহার করেছে।

২০১৮ সালের ২ নভেম্বর ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অব ইনডাইরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস এক আদেশে পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম এই ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দেয়। আদেশে ভারতের পেট্রাপোল (বাংলাদেশ অংশে বেনাপোল) শুল্কস্টেশন দিয়ে সড়কপথে কলকাতা বিমানবন্দর ও কলকাতা বন্দর দিয়ে তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানির সুবিধা দেওয়া হয়। এ ছাড়া ভারতের গেদে (বাংলাদেশ অংশে দর্শনা) শুল্কস্টেশন দিয়ে রেলে ভারতের নভোসেবা বন্দর ব্যবহারেরও সুবিধা দেওয়া হয়। তবে বাংলাদেশ শুধু বেনাপোল হয়ে কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহার করেছে।

এই সুবিধা দেওয়ার পর ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর প্রথম চালান রপ্তানি করে গাজীপুরের পি এন কম্পোজিট। প্রতিষ্ঠানটি প্রথম চালানে প্রায় ৪ হাজার কেজি ওজনের ৬০ হাজার ডলারের টি–শার্ট কলকাতা বিমানবন্দরের মাধ্যমে স্পেনে রপ্তানি করে। পরীক্ষামূলক রপ্তানি সফল হওয়ার পর দফায় দফায় এই সুবিধার মেয়াদ বাড়ায় ভারত।

বেনাপোল কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে এই সুবিধা পাওয়া গেলেও খুব বেশি চালান রপ্তানি হয়নি শুরুতে। এই সুবিধা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় ২০২৩ সাল থেকে। ২০২৩ সালে এই সুবিধা ব্যবহার করে রপ্তানি হয় ১৯ কোটি ডলারের পণ্য। ২০২৪ সালে রপ্তানি হয় ৬২ কোটি ডলারের পণ্য। চলতি বছরও বাংলাদেশ থেকে ১ হাজার ৮৮৮টি চালান গেছে এই পথে।

বুধবার এই সুবিধা বাতিল হওয়ার আগে সোমবার ১১টি চালান বেনাপোল দিয়ে ভারতের কলকাতা বিমানবন্দরে নেওয়া হয়েছে। সুবিধা প্রত্যাহার হওয়ায় ভারতের পেট্রাপোল কাস্টমস পোশাকবোঝাই চারটি ট্রাক গতকাল বৃহস্পতিবার ফিরিয়ে দিয়েছে।

আকাশপথে বছরে দুই লাখ টনের বেশি পোশাক রপ্তানির চাহিদা আছে। এর মধ্যে ৮০-৮৫ শতাংশই পরিবহন হচ্ছে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে। বাকি ১৫-২০ শতাংশ এত দিন ভারতের কলকাতা বিমানবন্দর দিয়ে পরিবহন হয়ে আসছিল। ভারত সুবিধাটি বাতিল করায় এখন আকাশপথে শতভাগ পণ্য শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে পরিবহন করতে হবে।

বিদেশি ক্রেতাদের হাতে পণ্য পৌঁছানোর দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডাস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কবির আহমেদ বলেন, শাহজালাল বিমানবন্দরে চাহিদার তুলনায় পণ্য পরিবহনের সক্ষমতা কম। বিগত সময়ে ডলার–সংকটে বিমান সংস্থাগুলোর বকেয়া আটকে গিয়েছিল। সে জন্য অনেক উড্ডয়ন কমিয়ে দেয়। এ ছাড়া শাহজালালে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংসহ উড়োজাহাজ পরিচালনার খরচ বেশি। এসব কারণে উড়োজাহাজে পণ্য পরিবহন খরচ কলকাতার চেয়ে একটু বেশি। এখন পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঢাকা বিমানবন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো হলে এই চাপ সামাল দেওয়া সম্ভব।

বেনাপোল কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, মূলত কলকাতা দিয়ে ২৩টি দেশে পোশাক রপ্তানি হলেও সবচেয়ে বেশি সংখ্যক চালানের গন্তব্য ছিল স্পেন। বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পোশাক ক্রেতা স্পেনের ইন্ডিটেক্সই এই পথ ব্যবহার করে বেশি চালান নিয়েছে।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি তৈরি পোশাক রপ্তানি হয় সমুদ্রপথে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। তবে ফাস্ট ফ্যাশনের পোশাক বিক্রেতারা দ্রুত সময়ে পোশাক নেওয়ার জন্য আকাশপথ বেছে নেন। আবার লোহিত সাগর সংকটের সময়ও আকাশপথে পণ্য নিয়ে গেছেন বিদেশি ক্রেতারা।

জানতে চাইলে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান  বলেন, ঢাকার চেয়ে কলকাতা বিমানবন্দর দিয়ে পণ্য পরিবহন খরচ কম। ঢাকা থেকে আকাশপথে কেন খরচ বেশি, তা পর্যালোচনা করতে হবে। কারণ, আকাশপথে পণ্য পরিবহনে ব্যয় সাশ্রয় করা গেলে পোশাক রপ্তানিতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়বে। পাশাপাশি পোশাক খাত যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে জন্য ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা অব্যাহত রাখা দরকার।

এদিকে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভারত হঠাৎ করে ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল করলেও তাতে বাংলাদেশের সমস্যা হবে না। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আমরা সংকট কাটানোর চেষ্টা করব।’ এ জন্য অবকাঠামো ও খরচ বৃদ্ধি নিয়ে কাজ হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

Please Share This Post in Your Social Media

আপডেট: ০৮:৩৯:৩৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫

রপ্তানির বিকল্প পথ কমল, বাড়বে চাপ

আপডেট: ০৮:৩৯:৩৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫

ভারতের কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহার করে এত দিন বিশ্বের ২৩টি দেশে রপ্তানি হয়ে আসছিল বাংলাদেশের পণ্য। বাংলাদেশকে একটানা প্রায় সাড়ে ছয় বছর দেওয়া এই সুবিধা গত বুধবার প্রত্যাহার করেছে ভারত। তাতে আকাশপথে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাড়তি চাপ তৈরি হবে বলে আশঙ্কা করছেন পোশাক রপ্তানিকারকেরা।

বেনাপোল স্থলবন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে ভারত এই সুবিধা দেওয়ার পর গত মঙ্গলবার পর্যন্ত বাংলাদেশের ৬২৪টি প্রতিষ্ঠান সড়কপথে বেনাপোল থেকে কলকাতা বিমানবন্দর দিয়ে পণ্য রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে সিংহভাগই পোশাক শিল্পপ্রতিষ্ঠান, সংখ্যায় ৬০৬। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশের প্রায় ৯৮ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে।

রপ্তানিকারকেরা বলছেন, আকাশপথে পণ্য পরিবহনে ঢাকার চেয়ে কেজিতে ৫০ সেন্ট থেকে ১ ডলার খরচ কম হয় কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহারে। আবার ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে জটের কারণেও দ্রুত পণ্য পরিবহনে কলকাতা বিমানবন্দরের ব্যবহার বাড়ছিল। ভারত এই সুবিধা বাতিল করায় পোশাক রপ্তানিতে বিকল্প একটি পথ হাতছাড়া হলো বাংলাদেশের। এতে বাড়তি চাপ তৈরি হতে পারে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও রপ্তানিকারক সূত্রে জানা যায়, গত বছর বেনাপোল হয়ে কলকাতা বিমানবন্দর দিয়ে প্রায় ৪৪ হাজার টন পণ্য রপ্তানি হয়েছে। ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল হওয়ায় সামনে একই পরিমাণ পণ্য শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে পরিবহন করতে হবে। আকাশপথে মাঝারি আকারের উড়োজাহাজে পরিবহন করা যায় ৬০ টন পণ্য। সেই হিসাবে এসব পণ্য পরিবহনে দরকার হবে অন্তত ৭৩০টি বাড়তি ফ্লাইট। রপ্তানিকারকদের শঙ্কা, বাড়তি চাপের কারণে ঢাকার আকাশপথে ইউরোপ-আমেরিকায় পণ্য পরিবহনে ভাড়া বাড়তে পারে। আবার জটও তৈরি হতে পারে।

বেনাপোল কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, ভারতের দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধায় সবচেয়ে বেশি পোশাক রপ্তানি করেছে নারায়ণগঞ্জের ফকির ফ্যাশন। প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৭ কোটি ডলারের পৌনে ৫ হাজার টন পণ্য রপ্তানি করেছে। সর্বশেষ গত সোমবার বেনাপোল বন্দর দিয়ে সড়কপথে কলকাতা বিমানবন্দরে প্রতিষ্ঠানটির একটি চালান স্পেনে পাঠানো হয়েছে।

গত বছরের জুলাই মাসে চট্টগ্রামের ইস্টার্ন অ্যাপারেলসের চারটি চালান বেনাপোল হয়ে সড়কপথে কলকাতা বন্দর দিয়ে সুইডেনে রপ্তানি হয়। কেন বিদেশি ক্রেতা কলকাতার বিমানবন্দর ব্যবহার করেছে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসির উদ্দিন চৌধুরী  বলেন, সে সময় ঢাকার চেয়ে আকাশপথে কলকাতার ভাড়া কেজিতে ৫০ সেন্ট কম ছিল। আবার ঢাকায় বুকিং পেতে দেরি হচ্ছিল। এ জন্য বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান খরচ কমাতে ও কম সময়ে পণ্য নেওয়ার জন্য কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহার করেছে।

২০১৮ সালের ২ নভেম্বর ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অব ইনডাইরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস এক আদেশে পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম এই ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দেয়। আদেশে ভারতের পেট্রাপোল (বাংলাদেশ অংশে বেনাপোল) শুল্কস্টেশন দিয়ে সড়কপথে কলকাতা বিমানবন্দর ও কলকাতা বন্দর দিয়ে তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানির সুবিধা দেওয়া হয়। এ ছাড়া ভারতের গেদে (বাংলাদেশ অংশে দর্শনা) শুল্কস্টেশন দিয়ে রেলে ভারতের নভোসেবা বন্দর ব্যবহারেরও সুবিধা দেওয়া হয়। তবে বাংলাদেশ শুধু বেনাপোল হয়ে কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহার করেছে।

এই সুবিধা দেওয়ার পর ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর প্রথম চালান রপ্তানি করে গাজীপুরের পি এন কম্পোজিট। প্রতিষ্ঠানটি প্রথম চালানে প্রায় ৪ হাজার কেজি ওজনের ৬০ হাজার ডলারের টি–শার্ট কলকাতা বিমানবন্দরের মাধ্যমে স্পেনে রপ্তানি করে। পরীক্ষামূলক রপ্তানি সফল হওয়ার পর দফায় দফায় এই সুবিধার মেয়াদ বাড়ায় ভারত।

বেনাপোল কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে এই সুবিধা পাওয়া গেলেও খুব বেশি চালান রপ্তানি হয়নি শুরুতে। এই সুবিধা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় ২০২৩ সাল থেকে। ২০২৩ সালে এই সুবিধা ব্যবহার করে রপ্তানি হয় ১৯ কোটি ডলারের পণ্য। ২০২৪ সালে রপ্তানি হয় ৬২ কোটি ডলারের পণ্য। চলতি বছরও বাংলাদেশ থেকে ১ হাজার ৮৮৮টি চালান গেছে এই পথে।

বুধবার এই সুবিধা বাতিল হওয়ার আগে সোমবার ১১টি চালান বেনাপোল দিয়ে ভারতের কলকাতা বিমানবন্দরে নেওয়া হয়েছে। সুবিধা প্রত্যাহার হওয়ায় ভারতের পেট্রাপোল কাস্টমস পোশাকবোঝাই চারটি ট্রাক গতকাল বৃহস্পতিবার ফিরিয়ে দিয়েছে।

আকাশপথে বছরে দুই লাখ টনের বেশি পোশাক রপ্তানির চাহিদা আছে। এর মধ্যে ৮০-৮৫ শতাংশই পরিবহন হচ্ছে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে। বাকি ১৫-২০ শতাংশ এত দিন ভারতের কলকাতা বিমানবন্দর দিয়ে পরিবহন হয়ে আসছিল। ভারত সুবিধাটি বাতিল করায় এখন আকাশপথে শতভাগ পণ্য শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে পরিবহন করতে হবে।

বিদেশি ক্রেতাদের হাতে পণ্য পৌঁছানোর দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডাস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কবির আহমেদ বলেন, শাহজালাল বিমানবন্দরে চাহিদার তুলনায় পণ্য পরিবহনের সক্ষমতা কম। বিগত সময়ে ডলার–সংকটে বিমান সংস্থাগুলোর বকেয়া আটকে গিয়েছিল। সে জন্য অনেক উড্ডয়ন কমিয়ে দেয়। এ ছাড়া শাহজালালে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংসহ উড়োজাহাজ পরিচালনার খরচ বেশি। এসব কারণে উড়োজাহাজে পণ্য পরিবহন খরচ কলকাতার চেয়ে একটু বেশি। এখন পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঢাকা বিমানবন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো হলে এই চাপ সামাল দেওয়া সম্ভব।

বেনাপোল কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, মূলত কলকাতা দিয়ে ২৩টি দেশে পোশাক রপ্তানি হলেও সবচেয়ে বেশি সংখ্যক চালানের গন্তব্য ছিল স্পেন। বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পোশাক ক্রেতা স্পেনের ইন্ডিটেক্সই এই পথ ব্যবহার করে বেশি চালান নিয়েছে।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি তৈরি পোশাক রপ্তানি হয় সমুদ্রপথে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। তবে ফাস্ট ফ্যাশনের পোশাক বিক্রেতারা দ্রুত সময়ে পোশাক নেওয়ার জন্য আকাশপথ বেছে নেন। আবার লোহিত সাগর সংকটের সময়ও আকাশপথে পণ্য নিয়ে গেছেন বিদেশি ক্রেতারা।

জানতে চাইলে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান  বলেন, ঢাকার চেয়ে কলকাতা বিমানবন্দর দিয়ে পণ্য পরিবহন খরচ কম। ঢাকা থেকে আকাশপথে কেন খরচ বেশি, তা পর্যালোচনা করতে হবে। কারণ, আকাশপথে পণ্য পরিবহনে ব্যয় সাশ্রয় করা গেলে পোশাক রপ্তানিতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়বে। পাশাপাশি পোশাক খাত যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে জন্য ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা অব্যাহত রাখা দরকার।

এদিকে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভারত হঠাৎ করে ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল করলেও তাতে বাংলাদেশের সমস্যা হবে না। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আমরা সংকট কাটানোর চেষ্টা করব।’ এ জন্য অবকাঠামো ও খরচ বৃদ্ধি নিয়ে কাজ হচ্ছে বলেও তিনি জানান।