এনবি নিউজ ডেস্ক : উত্তপ্ত ফ্রান্স এখন থমথমে। টানা ৫ দিন ধরে চলা বিক্ষোভ-সংঘর্ষ, ধরপাকড় শেষে অবশেষে শান্ত হয়ে আসছে প্যারিসের বর্ণবৈষম্যবিরোধী দাঙ্গা। কমে গেছে গ্রেফতারের সংখ্যাও।
রোববার রাতে দেশটির পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের মেয়ররা জনগণকে দাঙ্গাবিরোধী মিছিলের আহ্বান জানানোর পরপরই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসা শুরু করে।
সোমবার এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, পুলিশের ওপর হামলা, নাশকতা, লুটপাট এবং সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তির ক্ষতিসাধনে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে রোববার রাতেও ১৫৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আগের দিন শনিবার গ্রেফতার করা হয়েছিল ৭১৯ জনকে।
এদিকে একই দিন প্যারিসের একটি সড়কে দাঙ্গাকারীদের অগ্নিসংযোগের জেরে জ্বলতে থাকা এক সারি গাড়ির আগুন নেভাতে গিয়ে এক ফায়ার সার্ভিসকর্মী পুড়ে মারা যান। তারপর কিছুক্ষণের মধ্যেই যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে সাধারণ জনগণকে দাঙ্গাবিরোধী মিছিলে নামার আহ্বান জানান মেয়ররা।
বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘ফ্রান্সজুড়ে বসবাসকারী শান্তিকামী জনগণ নিশ্চয়ই ৫ দিন ধরে দেখছেন কী ভয়াবহ সহিংসতা হচ্ছে দেশজুড়ে। দাঙ্গাকারীরা চূড়ান্ত সহিংসতাপূর্ণ মনোভাব নিয়ে প্রজাতন্ত্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক নির্মমভাবে ধ্বংসের নেশায় মেতে উঠেছে। আমরা স্বীকার করছি, দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা এখনো সমাজ থেকে বৈষম্য নির্মূল করতে পারিনি। কিন্তু এটাও সত্য, দাঙ্গাকারীদের হাতে আমরা দেশকে ধ্বংস হতে দিতে পারি না।’
একই দিন দাঙ্গা বন্ধের আহ্বান জানান নাহেলের দাদিও। ফরাসি সংবাদমাধ্যমগুলোতে নাদিয়া নামে চিহ্নিত ওই নারী রোববার বিএফএম টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দাঙ্গাকারীদের শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘থাম, দাঙ্গা কর না। জানালা ভেঙ্গ না। স্কুলে ও বাসে হামলা চালিও না। বাসের যাত্রীদের মধ্যে অনেক মায়েরা রয়েছেন। বাইরে যারা হাঁটছেন তাদের মধ্যে অনেক মা আছেন।’
পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে জরুরি পদক্ষেপ নিয়েছেন দেশটির পেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁও। মেয়রদের ‘দাঙ্গাবিরোধী সমাবেশ’ আহ্বানের আগেই (সন্ধ্যায়) প্রধানমন্ত্রী এলিজাবেথ বোর্নি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গেরাল্ড ডারমানিনসহ সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আরেক দফা বৈঠকে বসেন প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁও। এ সময় দেশটির ২২০ শহরের মেয়রের সঙ্গে আপৎকালীন বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। আজই সেই বৈঠকে বসবেন তিনি।
গত ২৭ জুন ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের উপশহর নাঁ তে শহরে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় ১৭ বছর বয়সি তরুণ নাহেল এম। জানা গেছে, সড়কের নির্ধারিত গতিসীমা লঙ্ঘন করে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিল সে। এ সময় পুলিশ তাকে থামার নির্দেশ দিলেও তাতে সে কর্ণপাত করেনি। তারপর ট্রাফিক চৌকির এক পুলিশ সদস্যের গুলিতে নিহত হয় নাহেল।
নাঁ তে উপশহরটি মূলত আলজেরিয়া, তিউনিশিয়া এবং মরক্কো থেকে আগতদের অঞ্চল। নাহেল এবং তার মা মৌনিয়াও আলজেরীয় বংশোদ্ভূত এবং মুসলিম।
এই অভিবাসীদের বরাবরের অভিযোগ, দু-তিন প্রজন্ম ধরে ফ্রান্সে বসবাস করলেও তারা বৈষমের শিকার। পুলিশের গুলিতে নাহেল নিহত হওয়ার পর সেদিন থেকেই বিক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করেছিল নাঁ তেরে। তারপর বিকালের দিকে এক ভিডিও বার্তায় নাহেলের মা মৌনিয়া তার ছেলেকে হত্যাকারী পুলিশ সদস্যের বিচার দাবি করেন। ফ্রান্সের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে সেই ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায় এবং রাজধানী প্যারিসসহ শহরে শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
এ টি