১২:৩৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫

ছাত্রলীগের ব্যর্থতায় পুলিশের রক্তচক্ষু! জাতিসংঘের রিপোর্টে চাঞ্চল্যকর তথ্য

ডেস্ক নিউজ

ছবি: সংগৃহীত

আন্দোলন দমনে ছাত্রলীগ-পুলিশের যৌথ অপতৎপরতা

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর (ওএইচসিএইচআর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকারের ভূমিকা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্দোলন দমনে পুলিশের পাশাপাশি দলীয় ক্যাডারদেরও ব্যবহার করা হয়েছিল। বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালানোর অভিযোগ উঠে এসেছে।

ছাত্রলীগ ব্যর্থ হলে পুলিশের আক্রমণাত্মক ভূমিকা

প্রতিবেদনের ‘আন্দোলন ঠেকাতে ছাত্রলীগ-পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন’ শীর্ষক অংশে উল্লেখ করা হয়েছে, ছাত্রলীগের ব্যর্থতার পর পুলিশ আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। আন্দোলন যত বড় আকার ধারণ করে, ততই রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সমর্থকদের বিক্ষোভ দমনে সম্পৃক্ত করে। এতে যুবলীগের সদস্যরাও অংশ নেন। এমনকি অনেক মধ্যবয়সী পুরুষও সহিংসতায় জড়িয়ে পড়েন।

১৪ জুলাই থেকে দুই দিনের হামলা

১৪ জুলাই থেকে পরবর্তী দুই দিন ধরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা অব্যাহত থাকে। প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে সক্ষম হন। তবে পুলিশের ভূমিকা ছিল নির্বিকার। এক নেতা ওএইচসিএইচআরকে জানান, ছাত্রলীগের কর্মীরা আন্দোলন দমনে ব্যর্থ হলে পুলিশ আরও বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ব্যবহার করলেও কিছু ক্ষেত্রে প্রাণঘাতী ধাতব গুলিও ব্যবহার করে।

আবু সাঈদ হত্যা ও বিক্ষোভের বিস্তার

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, আওয়ামী লীগের সমর্থকরা পুলিশের সহায়তায় হামলা চালায়। ১৬ জুলাই এ ধরনের হামলায় অন্তত ছয়জন নিহত হন। তাদের মধ্যে বেরোবি শিক্ষার্থী আবু সাঈদও ছিলেন। তার হত্যার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ব্যাপকভাবে আন্দোলনে যোগ দেন।

সরকারের প্রস্তুতি ও আধাসামরিক বাহিনীর মোতায়েন

আন্দোলন দমনে সরকারের প্রস্তুতির কথাও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ১০ জুলাই থেকে পুলিশের পাশাপাশি র‍্যাব মোতায়েন করা হয়। ১৫ জুলাই থেকে আনসার ও ভিডিপির ১৪টি ব্যাটালিয়ন এবং ১৬ জুলাই থেকে বিজিবির প্রায় চার হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়। এছাড়া, ছয়টি সশস্ত্র পুলিশ ব্যাটালিয়নও আন্দোলন দমনে অংশ নেয়।

 আশুলিয়ায় হামলা ও শিশুদের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা

১৭ জুলাই র‍্যাব ও বিজিবি পুলিশের সহায়তায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কঠোরভাবে দমন করা হয়। তবে এতে বিক্ষোভ আরও তীব্র হয়ে ওঠে। ৪ আগস্ট সাভারের আশুলিয়ায় আওয়ামী লীগের সমর্থকরা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালায়। এতে তিন শিশুসহ সাতজন গুলিবিদ্ধ হন।

কোর কমিটি ও শেখ হাসিনার তদারকি

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত ‘কোর কমিটি’ নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কার্যক্রম সমন্বয় করতেন। এই কমিটিতে পুলিশ মহাপরিদর্শক, বিজিবি, র‍্যাব, আনসার-ভিডিপির প্রধান এবং গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকতেন। ২০ জুলাই থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন জ্যেষ্ঠ জেনারেলও এই কমিটিতে যোগ দেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার কার্যালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা নিয়মিতভাবে নিরাপত্তা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কার্যক্রম তদারকি করতেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

আপডেট: ০৭:২৬:৩৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
৩৭

ছাত্রলীগের ব্যর্থতায় পুলিশের রক্তচক্ষু! জাতিসংঘের রিপোর্টে চাঞ্চল্যকর তথ্য

আপডেট: ০৭:২৬:৩৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

ছবি: সংগৃহীত

আন্দোলন দমনে ছাত্রলীগ-পুলিশের যৌথ অপতৎপরতা

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর (ওএইচসিএইচআর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকারের ভূমিকা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্দোলন দমনে পুলিশের পাশাপাশি দলীয় ক্যাডারদেরও ব্যবহার করা হয়েছিল। বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালানোর অভিযোগ উঠে এসেছে।

ছাত্রলীগ ব্যর্থ হলে পুলিশের আক্রমণাত্মক ভূমিকা

প্রতিবেদনের ‘আন্দোলন ঠেকাতে ছাত্রলীগ-পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন’ শীর্ষক অংশে উল্লেখ করা হয়েছে, ছাত্রলীগের ব্যর্থতার পর পুলিশ আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। আন্দোলন যত বড় আকার ধারণ করে, ততই রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সমর্থকদের বিক্ষোভ দমনে সম্পৃক্ত করে। এতে যুবলীগের সদস্যরাও অংশ নেন। এমনকি অনেক মধ্যবয়সী পুরুষও সহিংসতায় জড়িয়ে পড়েন।

১৪ জুলাই থেকে দুই দিনের হামলা

১৪ জুলাই থেকে পরবর্তী দুই দিন ধরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা অব্যাহত থাকে। প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে সক্ষম হন। তবে পুলিশের ভূমিকা ছিল নির্বিকার। এক নেতা ওএইচসিএইচআরকে জানান, ছাত্রলীগের কর্মীরা আন্দোলন দমনে ব্যর্থ হলে পুলিশ আরও বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ব্যবহার করলেও কিছু ক্ষেত্রে প্রাণঘাতী ধাতব গুলিও ব্যবহার করে।

আবু সাঈদ হত্যা ও বিক্ষোভের বিস্তার

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, আওয়ামী লীগের সমর্থকরা পুলিশের সহায়তায় হামলা চালায়। ১৬ জুলাই এ ধরনের হামলায় অন্তত ছয়জন নিহত হন। তাদের মধ্যে বেরোবি শিক্ষার্থী আবু সাঈদও ছিলেন। তার হত্যার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ব্যাপকভাবে আন্দোলনে যোগ দেন।

সরকারের প্রস্তুতি ও আধাসামরিক বাহিনীর মোতায়েন

আন্দোলন দমনে সরকারের প্রস্তুতির কথাও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ১০ জুলাই থেকে পুলিশের পাশাপাশি র‍্যাব মোতায়েন করা হয়। ১৫ জুলাই থেকে আনসার ও ভিডিপির ১৪টি ব্যাটালিয়ন এবং ১৬ জুলাই থেকে বিজিবির প্রায় চার হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়। এছাড়া, ছয়টি সশস্ত্র পুলিশ ব্যাটালিয়নও আন্দোলন দমনে অংশ নেয়।

 আশুলিয়ায় হামলা ও শিশুদের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা

১৭ জুলাই র‍্যাব ও বিজিবি পুলিশের সহায়তায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কঠোরভাবে দমন করা হয়। তবে এতে বিক্ষোভ আরও তীব্র হয়ে ওঠে। ৪ আগস্ট সাভারের আশুলিয়ায় আওয়ামী লীগের সমর্থকরা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালায়। এতে তিন শিশুসহ সাতজন গুলিবিদ্ধ হন।

কোর কমিটি ও শেখ হাসিনার তদারকি

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত ‘কোর কমিটি’ নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কার্যক্রম সমন্বয় করতেন। এই কমিটিতে পুলিশ মহাপরিদর্শক, বিজিবি, র‍্যাব, আনসার-ভিডিপির প্রধান এবং গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকতেন। ২০ জুলাই থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন জ্যেষ্ঠ জেনারেলও এই কমিটিতে যোগ দেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার কার্যালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা নিয়মিতভাবে নিরাপত্তা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কার্যক্রম তদারকি করতেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।